আমরা ভোটটা চাই: বিএনপি
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০২০
ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপ-নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেছেন, আমরা বলি বিএনপি বিশ্বাস করে নির্বাচন এবং ভোট ছাড়া একটা সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নাই এবং জনগণ যে রাষ্ট্রের মালিক, এই মালিকা প্রমাণ করার একটা অধিকার হচ্ছে ভোট। এই অধিকারটাকে তারা (ক্ষমতাসীনরা) ছিনিয়ে নিয়েছে। এই অধিকারটিকে আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। আমরা ভোটটা চাই। পরে এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, বাংলাদেশের কালচারে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ থাকবেই। তবে কোনো ব্যাপারে কারো প্রতি কোনো ফেবার বা আনুকূল্যের কিছু নাই।
আগারগাঁওয়ের নিবাচন ভবনে বুধবার বিকেল তিনটায় ইসির সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির প্রতিনিধি দল। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, যুগ্ম-সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা ১৮ আসনের বিএনপির প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর ও বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম।
বৈঠক শেষে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসন নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অবহিত করতে এসেছি এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি সবার মনে একটা প্রশ্ন আছে যে, বিএনপিকে নির্বাচন করতে দেওয়া হয় না, জনগণকে ভোট দিতে দেওয়া হয় না। তারপরও আমরা কেনো নির্বাচনে আসি। তারপরও আমরা বলি বিএনপি বিশ্বাস করে নির্বাচন এবং ভোট ছাড়া একটা সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নাই এবং জনগণ যে রাষ্ট্রের মালিক, এই মালিকা প্রমাণ করার একটা অধিকার হচ্ছে ভোট। এই অধিকারটাকে তারা ছিনিয়ে নিয়েছে। এই অধিকারটিকে আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। এই নির্বাচনগুলো যে সুষ্ঠু হয় না। আপনাদের কাছে এসে আমরা কমপ্লেন করি। সেই কমপ্লেন গুলি যেভাবে কার্যকর হওয়ার দরকার, তা কার্যকর হয় না। তার একটাই কারণ নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনী এলাকার প্রশাসনিক দায়িত্ব কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে। পুলিশ থেকে শুরু সবই তো তার দায়িত্বে। আমরা বলেছি, এটা যদি এনশিওর করতে না পারেন যে সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তারা আপনার কথা শুনে নাকি বর্তমান সরকারের আওয়ামী লীগ সরকারের কথা শুনে। এটা যদি আইডেন্টিফাই করতে না পারেন। তাহলে সেখানে নির্বাচন কোনোভাবেই সুষ্ঠুভাবে হবে না।
আইন শৃঙ্খলায় যারা আছে তাদের ফেয়ার করতে হলে আপনাকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এখন তারা আপনার অধিনে আছেন এবং আপনি তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। সেই ধরণের পদক্ষেপ আপনি গ্রহণ করবেন সেটাই আমরা আশা করি। কারণ নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে ঢাকা-১৮ এলাকায় আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি প্রথম দিন থেকে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করি নাই। কিন্তু সরকারি দলের প্রার্থী প্রতিটা ক্ষেত্রে আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে এবং আমরা সেগুলো রিটার্নিং অফিসারের কাছে জানিয়েছি। কিন্তু তার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই। প্রথম দিক থেকেই কোনো এলাকায় আমরা গণসংযোগ করবো না রিটার্নিং অফিসারও পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু জানানোর পরেও দেখা গেলো পরের দিন আমাদের প্রার্থী সেখানে যেতে পারে না। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাদের যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন নিয়ে সেখানে অবস্থান করে। তারা এই মূহুর্তে পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চায়। একটা মারামারি সৃষ্টি করে তারা আমাদের মাঠ শূন্য করতে চায়। সেখানে আমাদের কর্মীরা যাতে বিচরণ করতে না পারে, ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতে না পারে, তাদেরকে মামলা দিয়ে তারা সেখান থেকে সরাতে চায়। একটাই কারণ জনগণের মেনন্ডেড নিয়ে যেহেতু সরকার আসে নাই। কাজেই এই সরকার ভোটকে খুব ভয় পায়। ভয় পায় বলেই জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাক এটা তারা চায় না। এ কারণে এখন থেকেই তারা নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করতে চাচ্ছে। আমরা কিন্তু চাচ্ছি না যোগ করেন তিনি।
আমরা এখানে থাকতে এই মূহুর্তে কিছুক্ষণ আগে বিএনপির প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীরের স্ত্রী গণসংযোগ করতে গেছে। সেখানে এলাকার গুণ্ডা পাণ্ডারা সেখানে তার সাথে অসদাচরণ করেছে, আক্রমণ করেছে এবং তারা যাতে গণসংযোগ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি, প্রয়োজনে আপনি দুই প্রার্থীকে ডাকেন বা প্রার্থীর প্রতিনিধিকে ডাকেন। এক জায়গায় বসে ভাগ করে দেন কে কোথায় সভা সমাবেশ করবে, গণসংযোগ করবে। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু এ্ নির্বাচন অবশ্যই ফেয়ার হতে হবে। যদি না হয় তাহলে এর দায় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে। সিরাজগঞ্জ বিএনপির প্রার্থীকে ঘর থেকেই বের হতে দিচ্ছে না। এই ভাবে একটা নির্বাচন হতে পারে না। আমরা বলেছি নির্বাচনে যা হবে তার দায়দায়িত্ব আপনাকেই নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। তবে এখনো সময় আছে আমরা চাই একটা ভালো নির্বাচন আপনি উপহার দিয়ে যান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিন্তু ভোট দেবেন ঢাকা-১৮ এলাকায়। আমরা বলেছি যাবার বেলায় এটা প্রমাণ করে যান আপনি যে এলাকার ভোটার অন্তত সে এলাকার উপ-নির্বাচন ভালো হয়েছে, সুষ্ঠু হয়েছে। কারণ জাহাঙ্গীর ওইখানে এমপি হয়ে গেলেই সরকার বিদায় নেবে না। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পেরেছেন সেটা চাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে আসে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য পরিবেশ দরকার। সেই পরিবেশটা সৃষ্টি করেন। কারণ আওয়ামী লীগ চায় না ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসুক। আর আমরা চাই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসুক। তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। বিভিন্ন জায়গায় আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। এখনো রঙিন পোস্টার রয়েছে। অন্যায়কারি যেই দলেরই হোক, যদি আমার দলেরও হয় হবে। কঠিনভাবে যেনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেট যেনো মুভ করে। এগুলো আমরা বলেছি।
অভিযোগ শুনার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কি বলেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যা উনি বলেছেন- আপনারা বলে ভালো করেছেন। এখনো সময় আছে। আমরা চেষ্টা করবো এগুলো যাতে কার্যকর হয় এবং আপনারা প্রস্তাব ভালো দিয়েছেন এটা উনি বলেছছেন। আমরা তো চাই উনি আন্তরিক হোক। কারণ এখনো সময় আছে। আমরা ভোটটা চাই। কাজেই উনি আন্তরিক হোক এটাই আমরা চাই।
পরে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, বিএনপি প্রতিনিধি দলের মোটা দাগে তিনটি অভিযোগ ছিল। পুলিশের অসযোগিতা বা অসহায়ত্ব, বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করা। এই অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন শুনেছেন। সেখানে আমাদের রিটার্নিং অফিসারও ছিলেন কমিশন তাৎক্ষনিক নির্দেশনা দিয়েছেন। পরবর্তীতে আবার কমিশন মিটিংয়ে বসে একটা সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন হয় সেবিষয়ে যা যা করা দরকার নির্বাচন কমিশন তাই তাই করবে। এ বিষয়ে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছে।
তারা আশ্বস্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যা তারা আশ্বস্ত হয়েছেন, ভরসা করতে পেরেছেন। কয়েকটি বিষয়ে তারা প্রশংসা করেছেন। এই মূহুর্তে যেখানে আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে সেগুলো ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেটকে বলা হয়েছে ওখানে মোবাইল কোর্ট টিম আছে। তারা যেনো এখনি সেখানে চলে যায়। কোনো কোনো পুলিশ সদস্য ফেবার করছেন, সে বিষয়গুলো ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিশন আছে, সেখানে জানানো হয়েছে, তারা তদন্ত শুরু করে দিয়েছে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শতভাগ অভিযোগ সঠিক হবে, তা নাও হতে পারে। অনেক অভিযোগ আমলে নাও আসতে পারে। বাংলাদেশের কালচারে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ তো থাকবেই। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে স্ট্রিক্ট। কোনো ব্যাপারে কারো প্রতি কোনো ফেবার বা আনুকূল্যের কিছু নাই।