ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভাঙাগড়ার খেলায় ২০ দলীয় জোট

মাহমুদুল হাসান
🕐 ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০২০

২০ দলীয় জোটের কোনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম নেই প্রায় এক বছর। জোটভুক্ত বেশ কয়েকটি দলে চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা। এ নিয়ে জোট শরিকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভাজন তৈরি হয়েছে। জোটের প্রধান শরিক বিএনপিও এতে বিব্রত। দলে ভাঙন তৈরি হলেও তারাই আবার জোটে থেকে যাচ্ছে। ফলে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব। প্রকাশ্য ঘোঘণা না থাকলেও নিজেদের আনুগতের সঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা। এমন অবস্থায় জনমুখী ইস্যুতে ২০ দলের নীরবতাই দেখা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০ দলীয় জোটে অস্তিত্ব সংকটে। তারা জোটগতভাবে আন্দোলনেও নেই, এখন নির্বাচনেও নেই। দুই-একটি দল সক্রিয় আছে নিজেদের দলীয় কর্মসূচি নিয়ে। শুধু রয়েছে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কিংবা দিবস পালন করে টিকে থাকার লড়াই। তবে ব্যতিক্রমও আছেন কেউ কেউ। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় ইস্যু কিংবা রাজনৈতিক বিষয়ে সরব বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

এছাড়া এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদও বক্তব্য-বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ। ধর্ষণবিরোধী বড় একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী। লেবার পার্টিসহ অন্যান্য ছোট দলগুলোরও একই অবস্থা। বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যেই তারা সীমাবদ্ধ। তারা জোটগত বড় কোনো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে পারেনি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে জোট শরিকরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই জোট ছেড়েছেন বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ। জাতীয় মুক্তিমঞ্চ করে বিএনপির সঙ্গে মতবিরোধে তৈরি হয় কর্নেল (অব.) অলি আহমদের। যার প্রভাব পড়ে নিজ দলেও। এলডিপি এখন দুই ভাগে বিভক্ত। কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বে একটি অংশ চলছে কোনোমতে। অপর অংশে দলটির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আবদুল করিম আব্বাসী ও সাবেক এমপি আবদুল গনি প্রমুখ।

তারা গত ২৬ অক্টোবর বিএনপি নেতাদের নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে দলের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও পালন করে। অপরদিকে কর্নেল অলি প্রতিষ্ঠাবার্ষীকীতে ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করে। এতে যোগ দেয় জামায়াত, কল্যাণ পার্টি, জমিয়তে ওলামা, জাগপা, জাতীয় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

এদিকে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের কিছু নেতা সম্প্রতি দল থেকে বেরিয়ে ‘এবি পার্টি’ নামে নতুন দল গড়ার ঘোষণা দিয়েছে। ১১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করেছে তারা। নতুন এ দলে সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আর ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ নিয়েও বিএনপি জোটেও অস্তিরতা বিরাজ করছে।

২০ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় ৯-১০ মাস ধরে বিএনপির সঙ্গে ২০ দলের অন্যমত শীর্ষ নেতাদের আনুষ্ঠানিক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন। করোনাকালের আগ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকে বসা হচ্ছে না।

ভার্চুয়ালিও কোনো যোগাযোগ নেই। সিকি, আধুলি নিয়ে জোট করার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে বলেও উল্লেখ্য করেন জোটের এই নেতা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা (২০ দলীয় জোট) গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আছি, থাকব। বিএনপি এককভাবে নির্বাচনগুলোতে (উপনির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচন) অংশগ্রহণ করছে। এখানে ২০ দলকে রাখা হচ্ছে না।

জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের অন্যমত শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ দলীয় জোটকে যতটুকু সক্রিয় থাকার কথা ছিল, আমরা ততটুকু সক্রিয় নই। এজন্য শুধু বিএনপি দায়ী নয়, আমরাও অনেকাংশে দায়ী। এই অবৈধ সরকারের পতন ঘটনাতে হলে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। তাই জোটকে কার্যকর করতে হবে।

তিনি বলেন, আন্দোলন, অস্তিত্ব এবং কর্মপন্থা বহুলাংশে নির্ভর করে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপির ওপর। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই। কল্যাণ পার্টি ২০ দলীয় জোটে আছে এবং থাকবে উল্লেখ্য করেন তিনি।

 
Electronic Paper