অতীত ভুলে এক হচ্ছেন নব্বইয়ের ছাত্রনেতারা
মাহমুদুল হাসান
🕐 ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২০
দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও সরকারের দমন-পীড়নসহ নানামুখী সংকটে বিএনপি। এক সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে বারবার পরাস্ত হয়ে ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে। ফলে নির্বাচন কিংবা আন্দোলন- কোনো কিছুুতেই নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে অতীত ভুলে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে বিএনপি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা, নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ’৯০-এর ছাত্রনেতাদের বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী দিনে রাজপথে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছেন।
এ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্থান ’৯০-এর ছাত্রনেতাদের হাত ধরে। আজকে দলের সংকটকালে অতীতের ভুলত্রুটি শুদ্ধে তারা আবারও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। তিনি বলেন, ’৯০-এর এরশাদবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত হাতিয়ার হিসেবে ছাত্রদলের যারা ছিলেন, তাদের হাত ধরেই আবার বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে চায়।
সদ্যসমাপ্ত বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ব্যাপক ভরাডুবি হয়েছে বিএনপির। এবার ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন না দলের নীতি-নির্ধারকরা। এবার নতুন ছকে এগোচ্ছেন তারা। তাই ’৯০-এর ছাত্রনেতাদের সামনে এনে নির্বাচন পরিচালনায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ’৯০-এর প্রভাবশালী ছাত্রনেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানকে প্রধান সমন্বয়ক করে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে। ’৯০-এর প্রভাবশালী ছাত্রনেতাদের মধ্যে এ কমিটিতে আরও যারা রয়েছেন, তারা হলেন- হাবীবুর রহমান হাবীব, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রমুখ। এছাড়া নারীনেত্রী শিরিন সুলতানাও রয়েছেন এ প্রক্রিয়ায়।
জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কমিটি গঠন করা হলেও লক্ষ্য স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দল মেটানোসহ দলকে সংগঠিত করা। ইতোমধ্যে সমন্বয় কমিটি বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে। নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামার আগে দলের অভ্যন্তরীণ সংকটগুলো নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। এছাড়া কমিটির প্রধান সমন্বয়কের নেতৃত্বে দফায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে। গত দুই দিনে তারা অঙ্গ দলের সঙ্গে প্রায় ছয়টি বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে নেতাদের উদ্দেশে আমানউল্লাহ আমান বলেন, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন বিএনপির জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করব। গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরাতে এ লড়াই নতুন করে শুরু হবে। দলের নেতাকর্মীদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো ভ্যানগার্ডের দায়িত্ব পালন করে নাগরিকদের ভোটের অধিকার রক্ষায় পাহারায় থাকতে হবে।
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, সরকার বিরোধী মতকে সহ্য করতে পারছে না। একতরফা নির্বাচন করে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট ঢুকতে দিচ্ছে না, এজেন্ট বের করে দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে সরকার এমনটা করবে না। যদি করে এর জবাব জনগণই দেবে। তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। যে কারণে জনগণের ভোটাধিকার ফিরে দেওয়ার জন্য দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা হাবীবুর রহমান হাবীব দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ২৩ তারিখের পর আমরা নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামব। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মিটিং করেছি। এবার ভোট চুরি হলে এখান থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।