সংগঠনে মনোযোগ নেই ছাত্রলীগের
সালাহ উদ্দিন জসিম
🕐 ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ০১, ২০২০
সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ নেই ছাত্রলীগের। নানা দিবস পালন আর সংকটে মানবিক ও সামাজিক কাজ করে প্রশংসিত হলেও গোছাতে পারেনি সংগঠন। কেন্দ্রসহ ১০৮টি ইউনিটেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ। কমিটি করার উদ্যোগ বা তৎপরতাও দৃশ্যমান নয়। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সর্বস্ব এই কমিটি কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক দায়িত্বও বণ্টন করেনি। পূরণ হয়নি কেন্দ্রের অনেক শূন্য পদ।
২০১৮ সালের ১১-১২ মে কমিটি গঠন ছাড়াই ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন হয়। একই বছরের ৩১ জুলাই রেজয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি দেওয়া হয়। শোভন-রাব্বানী দীর্ঘ ৯ মাস পর ২০১৯ সালের ১১ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে। কমিটিসহ নানা বিতর্কে একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
১নং সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা দায়িত্বে এসে নানা অভিযোগের কারণে ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে কেন্দ্রীয় ৩২ নেতাকে সংগঠনের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের মিলনমেলায় ভারমুক্ত করে জয়-লেখককে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জয়-লেখকের দায়িত্ব পাওয়ার নানা হিসাব থাকলেও সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনের তারিখ থেকে পরবর্তী সম্মেলনের তারিখ গণনা হয়। সে অনুযায়ী এ বছরের মে মাসেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটির। এ নিয়ে ছাত্রলীগের একটা গ্রুপ সম্মেলনের দাবি তুলছেন। তাদের দাবি, কেন্দ্রের শূন্যপদ পূরণ, কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন, জেলা ইউনিটের সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে সংগঠনকে গতিশীল করা।
এ বিষয়ে সংগঠনটির সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ। ২০১৮ সালের ১১-১২ মে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর ইতিমধ্যে দুই বছর চার মাস হয়ে গেছে। শোভন রাব্বানীর বিদায়ের পরও এক বছর দুই মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। কেন্দ্রসহ ১০৮টি ইউনিটও মেয়াদ উত্তীর্ণ। কেন্দ্রীয় কমিটির ভেতরেও প্রায় ৬০/৬৫ পদ শূন্য।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সর্বস্ব সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এ পর্যন্ত কেন্দ্রের কোনো নেতাকেই সাংগঠনিক দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সাংগঠনিক সফর করতে পারেনি। এ পর্যন্ত হয়নি কোনো বর্ধিত সভাও।’
তবে এ নিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে বেশ যৌক্তিক বক্তব্যও আছে। তারা বলছেন, আমরা একটা সংকটের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পেয়েছি। শুরুতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির অসঙ্গতিগুলো দূর করেছি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাবেক ও বর্তমানদের মিলন মেলাসহ নানা নিয়মিত কর্মসূচি পালন করেছি। এরই মধ্যে সারাবিশ্বে শুরু হয়েছে করোনা মহামারী।
এ সংকটে দেশের সাধারণ ছাত্রদের পাশে থাকার পাশাপাশি কৃষকের ধান কাটা, অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা, অসহায় মানুষের খাদ্য সহায়তা প্রদানসহ নানা মানবিক কাজে ব্যস্ত সময় কেটেছে। আশা করছি, শিগগিরই সংকট কাটিয়ে আমরা আলোর মুখ দেখব। সংগঠন গোছাতে মনোযোগী হবো।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ইউনিটের শূন্যপদ পূরণ বা সম্প্রসারণের বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ইউনিটগুলোর সম্মেলন আমরা শিগগিরই করব। এ সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু হবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলাভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টন করে দেব। তাদের মাধ্যমে জেলার কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা এবং অধীনস্থ উপজেলা ইউনিটের সম্মেলন ও কমিটি হবে।’
কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাগজে-কলমে হিসাব করলে সব ইউনিটেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ। তবে কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখার সম্মেলন নেত্রীর (ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তে হয়। তিনি যখন চাইবেন তখনই সম্মেলন হবে।’
তবে সংগঠন গোছানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থতার বিষয়টি ফুটে উঠলেও মানবিক কাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছে ছাত্রলীগ। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ও সংসদের বাইরে ছাত্রলীগের প্রশংসা করে বক্তব্য দিয়েছেন। করোনায় মানুষের চিকিৎসাসেবায় পাশে দাঁড়ানো, বিনা পারিশ্রমিকে দেশব্যাপী কৃষকের ধান কেটে দেওয়া, গরিব ও অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদান ও লাশ দাফনে দায়িত্ব নিয়ে তারা জনসাধারণেরও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।