ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ব্যর্থতায় আবদ্ধ ঢাকা মহানগর বিএনপি

মাহমুদুল হাসান
🕐 ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০

নিবার্চন, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও আন্দোলন সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার ‘তকমা’ থেকে বের হতে পারছে না বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি। নিজস্ব বলয়ের লোক নেতৃত্বে বসানো, অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং জবাবদিহিতা না থাকায় ব্যর্থতার মূল কারণ হিসেবে দেখেছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। চলমান পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করলেও মহানগর কমিটি নিয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

 

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, বিএনপির প্রতি মানুষের যে সর্মথন আছে, নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে তা কাজে লাগতে পারেনি। ফলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তরুণ নেতাদের হাতে দায়িত্ব দিলে অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে মহানগর বিএনপি। ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিণ দুইভাগে ভাগ করা হয়। ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হিসেবে আবদুল কাইয়ুম ও আহসান উল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল ও কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এর মধ্যে কমিটির গঠনের আগে থেকেই বিদেশে ‘পলাতক’ হত্যা মামলার আসামি কাইয়ুম। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আহসান উল্লাহ।

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল আলিম নকী। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই মেয়াদী এই কমিটি চার বছর হতে চলেছে। এখন কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি কোনো অংশই। সরকারের দমন পীড়ন, মামলা-হামলাকে দোহাই দিয়ে দায় সাড়ছেন নেতারা। বিএনপির সূত্র জানায়, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক দুই প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকা প্রথম থেকে নিজেদের ‘অনুসারী’ তৈরি করেন। ফলে নগর বিএনপিতে শুরু থেকে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। বর্তমান ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা প্রধানত মির্জা আব্বাসপন্থী, হাবিব-উন নবী খান সোহেলপন্থী, ইশরাক হোসেনপন্থী (সাবেক সাদেক হোসেন খোকাপন্থী), ও আবুল বাশারপন্থীতে বিভক্ত। আর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতাকর্মীরা আবদুল কাইয়ুমপন্থী, সদ্য প্রয়াত আহসান উল্লাহপন্থী এবং আবদুল আউয়াল মিন্টুপন্থীতে বিভক্ত। এছাড়াও সাবেক সচিব আবদুস সালাম ও ঢাকা-৫ সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের নিজস্ব বলয়ের লোক রয়েছে।

এর বাইরেও ঢাকার বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মীরা বিভক্ত আছে। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আন্জু দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ঢাকা উত্তরে আমাদের ২৬ থাকা কমিটি এবং ৫৪টি ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। দলীয় কর্মকা- কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এটা ঠিক আমরা সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছি। জনসমর্থন কাজে লাগাতে পারেনি। তবে মহানগর বিএনপির যে কর্মী সমর্থক আছে তাতে আমরা যেকোনো সময় ঘুরে দাঁড়াব। ঢাকা মহানগর বিএনপির দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, সরকারের দমন পীড়ন, মামলা-হামলার কারণে আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি। সভাপতি বাইরে থাকলে সাধারণ সম্পাদক থাকেন জেলে। আবার সাধারণ সম্পাদক বাইরে থাকলে সভাপতি থাকেন জেলে। এভাবেই আমাদের সময়টা চলে গেছে। তিনি বলেন, আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির কাঠামো আছে। কিন্ত পূর্ণাঙ্গ করতে পারিনি। এটা ঠিক আন্দোলন সংগ্রামে কর্মসূচি পালন করতে হলে শক্তিশালী কমিটি থাকার প্রয়োজন। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পেলে অচিরেই আমরা কমিটিগুলো পুনর্গঠন কাজ শেষ করতে পারব। মহানগর দক্ষিণের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ২৪টি থানার মধ্যে ২১টি থানায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া কিছু ওয়ার্ড কমিটিও করা হয়েছে। জেল-জুলুমের কারণে সব কিছু ঠিকঠাক হয়নি। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। একেবারে কিছু করেনি এটা বলা যাবে না।

এদিকে ঢাকা মহানগর বিএনপির কাঠামোর পরিবর্তন নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন গত সিটি নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের দলটির প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনের সময় মহানগরে বিএনপির আভ্যন্তরীণ কিছু দুর্বলতা আমার নজরে এসেছে। এটা নিয়ে আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। শুধু কেন্দ্রভিত্তিক রাজনীতি নয়, ওয়ার্ড পর্যায়ে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিসহ বেশি কিছু প্রস্তাবনা আমি দিয়েছি।

উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানের মৃত্যুর পর গত ২২ জুন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম নকিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি সহ-সভাপতি ছিলেন। অভিযোগ ওঠে, গঠনতন্ত্র বহির্ভূত সহ-সভাপতি থেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুবরণ করলে বা কোনো কারণে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবে। এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এ নিয়ে দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ¦ তৈরি হয়েছে। তবে এসবের অবসান চান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তার মহানগর কমিটি সংস্কারের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করে তরুণ নেতৃত্বের মাধ্যমে অতীতের ব্যর্থতার ‘তকথা’ থেকে বের হয়ে আসতে চান।

 

 
Electronic Paper