ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজধানীতে সংগঠন চাঙ্গা রাখতে চায় আ.লীগ

সালাহ উদ্দিন জসিম
🕐 ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০

রাজধানীতে সংগঠন চাঙ্গা রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলের ঢাকা মহানগরের দুই শাখায় নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি করছেন তারা। সাবেক ছাত্র, যুব নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ওই কমিটি বিরোধী জোটের আন্দোলন-সংগ্রামের মোকাবিলা এবং যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন নেতারা।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ শাখা ঢাকা মহানগর। দলের অনেক কিছুই এখানকার সফলতা-ব্যর্থতার ওপর নির্ভর করে। এ কারণেই দলের হাইকমান্ডসহ সবার নজর এই শাখায় ওপরই বেশি।

নেতাদের দাবি, অতীতে অবিভক্ত মহানগর শাখার সাংগঠনিক দক্ষতার ওপর ভর করে আজ দল ক্ষমতায়। ২০০৬ সালের লগি-বৈঠার আন্দোলন থেকে শুরু করে-২০০৮ এ নির্বাচনী যুদ্ধ, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ,জ্বালাও-পোড়াওবিরোধী আন্দোলনসহ সব কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর শাখা বেশ সক্ষমতা দেখিয়েছে। এবারের কমিটিও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে।

জানা গেছে, ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। ১৫ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। প্রস্তাবিত দুই কমিটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের পাশাপাশি জায়গা দেওয়া হয়েছে সাবেক যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের। তবে উত্তরে গ্রুপিংয়ের শিকার হয়েছেন প্রভাবশালী ৫ নেতা। তাদের পদাবনতি দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের জুনে মোহাম্মদ হানিফ ও মোফাজ্জল হোসেনের (মায়া চৌধুরী) নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি হয়। এই নেতৃত্বই ২০১৬ পর্যন্ত নানা সংগ্রামে সংগঠন পরিচালনায় ছিলেন। এরপর ২০১৬ সালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত করে কমিটি দেওয়া হয়। উত্তরে একেএম রহমতুল্লাহ ও সাদেক খান, দক্ষিণে আবুল হাসনাত ও শাহে আলম মুরাদ নেতৃত্বে আসেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে ফের নতুন নেতৃত্ব আসে দুই সিটিতে। উত্তরে বজলুর রহমান ও এসএম মান্নান কচি, দক্ষিণে আবু আহমেদ মন্নাফি ও হুমায়ুন কবির আসেন নেতৃত্বে। মূলত এরাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি (প্রস্তাবিত) জমা দিয়েছে কেন্দ্রে।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমরা যে কমিটির প্রস্তাব করেছি, তাতে অতীতে পোড় খাওয়া অভিজ্ঞ আওয়ামী লীগ নেতা, দুর্দিনের যুবলীগ নেতা ও ছাত্রলীগ নেতাদের সমন্বয় করা হয়েছে। এ কমিটি সামনের দিকে মহানগরে যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম ও নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে পারদর্শিতা দেখাতে পারবে, ইনশাআল্লাহ।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, ‘আসলে কমিটি নয়, আমরা সভানেত্রীর দফতরে নামের লিস্ট দিয়েছি। নেত্রী সবাইকে চিনেন, জানেন। তিনি কমিটি করে দেবেন।’

পাঁচ নেতার পদাবনতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পারফরমেন্সের ওপর ভিত্তি করে কাউকে পদোন্নতি আবার কাউকে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। সভানেত্রী এবং কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সেটার সংযোজন বিয়োজন করতে পারবেন।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রস্তাবিত কমিটি : আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দফতরে জমা দেওয়া ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রস্তাবিত কমিটির বেশির ভাগ নেতার নামের তালিকা পাওয়া গেছে। ওই কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে রাখা হয়েছে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, আসলামুল হক এমপি, নাজিম উদ্দিন, জাহানারা বেগম, মুজিবর রহমান, কাদের খান, এ কে এম জসিম উদ্দিন, এসএম তোফাজ্জল হোসেন, বশির উদ্দিন আহমেদ এবং শাহনেওয়াজকে।

প্রস্তাবিত কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. ওয়াকিল উদ্দিন, হাবিব হাসান এবং মতিউর রহমান মতির নাম আছে। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আজিজুল হক রানা, মিজানুর রহমান মিজান এবং জহিরুল হক জিল্লুর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মাজহারুল আনাম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মিজানুল ইসলাম মিজু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক অধ্যক্ষ এমএ সাত্তার, শ্রম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মজনু, কোষাধ্যক্ষ পদে ইঞ্জিনিয়ার সালাম চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পি, শিল্প বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক খসরু চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এস এম মাহবুব আলম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক নাজমুল আনাম ভূঁইয়া, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহেরুন্নেসা মেরী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আবুল কাশেম খান, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আবদুল গাফফার, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক কর্নেল ডা. কানিজ ফাতেমা (অব.), সহ দফতর সম্পাদক আবদুল আউয়াল শেখ ও সহ প্রচার সম্পাদক এম এ হামিদের নাম রয়েছে।

প্রস্তাবিত কমিটিতে সাবেক দপ্তর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল, সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক এম এ এম রাজু আহমেদ, সাবেক শ্রম সম্পাদক বরকত খান, সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক জাফর নিজামী, সাবেক সহ দপ্তর সম্পাদক শাহরুখ খান মিরাজকে পদাবনতি দিয়ে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়া সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক সদস্য আমির হোসেন মোল্লা, আইয়ুব আকরাম মুকুল, হাবিবুর রহমান সাচ্চা, রবিউল ইসলাম রবি, আবুল হাসনাত, আনোয়ার হোসেন মজুমদারসহ কয়েকজন। নতুন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ওবায়দুর রহমান, এজাজ আহমেদ, আতাউর রহমান বোরহান, হিমাংশু কিশোর দত্ত, খালেদ বাহার বিউটি, ইকবাল হোসেন তিতু, সারোয়ার আলম, আবু ইলিয়াস রাব্বানী লিখন, সাইফুদ্দিন আহমেদ টিপু, নাসিমুল হক কুসুম ও ফয়েজ আহমেদ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রস্তাবিত কমিটি

১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রস্তাবিত কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। এতে রয়েছেন, সহ-সভাপতি পদে নুরুল আমিন রুহুল এমপি, আওলাদ হোসেন, খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, দিলীপ রায়, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, মেজবাউর রহমান ভূইয়া রতন, সাজেদা বেগম ও আবদুস সাত্তার মাসুদ। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোর্শেদ কামাল, সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মিরাজ হোসেন এবং যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহিকে রাখা হয়েছে।

সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, সাবেক প্রচার সম্পাদক আকতার হোসেন এবং মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবিরের নাম রয়েছে। সম্পাদকীয় পদে আসছেন অ্যাডভোকেট জগলু, আব্দুর রহমান, আশিকুর রহমান লাভলু, শেখ মোহাম্মদ আজহার, নাঈম নোমান, এফএম শরিফুল ইসলাম, এডভোকেট তাহমিনা সুলতানা, জামাল হোসেন, আনিস আহমেদ, নাসির হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, এস কে বাদল রায় ও নজরুল ইসলাম।

দপ্তর, সহ-দপ্তর, প্রচার ও সহ-প্রচার পদে সাবেক ছাত্রলীগের ৪ নেতার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন রিয়াজ উদ্দিন, আরিফুর রহমান রাসেল, চৌধুরী সাইফুন্নবী সাগর এবং আসাদুজ্জামান আসাদ। ৩৬টি সদস্য পদে হাজী মোহাম্মদ সেলিম এমপি, শাহাবুদ্দিন শাহা, দীপু চৌধুরী, এএসএম শহিদুল ইসলাম মিলন, গোলাম রাব্বানী বাবলু, সালাউদ্দিন বাদল, সাইফুল ইসলাম (মাসুদ সেরনিয়াবাত), মুজিবুর রহমান, জসিম উদ্দিন খান আজম, শাহজাহান ভূইয়া মাখন, আইয়ুব আলী খান, দেওয়ান গাফফার আহমেদ রাজিব, রাকিব হাসান সোহেল, মুকুল, মুক্ত, ওবায়েদ, সারোয়ার হোসেন লিপু, তরিকুল ইসলাম, শামীম প্রমুখের নাম রয়েছে।

এছাড়াও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তারা হচ্ছেন- আবুল বাশার, ওমর বিন আজিজ তামিম, মামুনুর রশিদ শুভ্র, সৈয়দ রোকসানা ইসলাম চামেলী, শরিফুল ইসলাম দিলু, আসাদুজ্জামান আসাদ, মারুফ আহমেদ মনসুর, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন, আনিসুর রহমান, মকবুল হোসেন ও লাভলী চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, কমিটি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে হয়তো নির্ভুল বলা যাবে না। তবে কমিটি ঘোষণা হলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে, এটাই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সৌন্দর্য।

 
Electronic Paper