ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গণফোরামে ভাঙনের সুর

মাহমুদুল হাসান
🕐 ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০

প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিতে যাচ্ছে। সংগঠনে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব দলকে ভাঙনের দিকে নিয়ে যাবে, না কি সংকট নিরসনে শীর্ষ নেতার কোনো ‘বার্তা’ আসবে, তা জানার অপেক্ষার প্রহরও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে। এরই মধ্যে আগামী সপ্তাহে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে বর্ধিত সভা আহ্বান করছে গণফোরামের একটি অংশ।

দলীয় সূত্র জানায়, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গণফোরামের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। গণফোরাম থেকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দলের এ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সূচনা। পরবর্তী সময়ে গণফোরাম থেকে বিজয়ী এক সংসদ সদস্যের শপথ নেওয়া না নেওয়াকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়। এরপর জাতীয় কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দলে বিভক্তির সৃষ্টি হয়।

ঘটনাপ্রবাহে দলে বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটে। কমিটি থেকে দুই সাংগঠনিক সম্পাদকসহ চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। দলের সাংগঠনিক অচলাবস্থার তৈরি হয়। সাংগঠনিক স্থবিরতা দূর করতে গত বছরের ২৬ এপ্রিল গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয় সংগঠনের সভাপতিকে।

নিয়মানুযায়ী সাবজেক্ট কমিটি গঠনের পর ৩-৪ জন কেন্দ্রীয় নেতা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কমিটি গঠন করে সভাপতির অনুমোদন করিয়ে নেন। কিন্তু এতে সাংগঠনিক অবস্থা গতিশীল হওয়ার পরিবর্তে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। তা নিরসনে ড. কামাল হোসেন কাউন্সিলের ক্ষমতাবলে গত বছরের ৫ মে গঠিত গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।

পরবর্তী কাউন্সিল না হওয়ার পর্যন্ত সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের জন্য ২ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দল থেকে জানানো হয়। এরপর ডা. কামাল হোসেনকে সভাপতি এবং রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। যা এক বছরও পার করতে পারেনি। আবার দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হয়। গত মার্চে বহিষ্কার পাল্টা বহিষ্কারের মুখে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেন কামাল হোসেন।

একই সঙ্গে পরবর্তী কাউন্সিল না হওয়ার পর্যন্ত দুই সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতি হিসেবে থাকেন কামাল হোসেন নিজেই এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়াকে।

গত কয়েকদিন আবারও সরব হয়ে ওঠে দলের একটি অংশ। তারা ড. কামাল হোসেনকে বারবার চিঠি দিয়ে গণফোরামের বর্ধিত সভা ডেকে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের কথা জানায়। কিন্তু এতে সাড়া না পেয়ে দলটির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু, সাবেক নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বর্ধিত সভা ডাকা হয়। এ সভায় কামাল হোসেনকে আমন্ত্রণ জানান তারা।

এ বিষয়ে গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা গত পরশু (২১ সেপ্টেম্বর) এই বর্ধিত সভায় দাওয়াত দিতে কামাল স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম। উনি এতে সম্মতি দিয়েছেন। এর একদিন পরই ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার নামে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৬ সেপ্টেম্বর গণফোরামের নামে ডাকা বর্ধিত সভার সঙ্গে গণফোরামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

তিনি বলেন, রেজা কিবরিয়া গণফোরামকে শেষ করে দিচ্ছেন। গত ১৭ মাস ধরে তিনি কোনো সভা ডাকেননি, অফিস করেননি। মিটিং ডাকতে বললে তাও তিনি ডাকেন না। এভাবে একটি দল চলতে পারে না। আমরা অনেক বার কামাল হোসেনকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি। কী আর বলব, তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সুব্রত চৌধুরী বলেন, এখনই আমরা নতুন কোনো প্ল্যাটফরম ঘোষণার দিকে যাচ্ছি না। আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধভাবে দল করতে চাই।

জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য কেউ গণফোরামের সভা ডাকতে পারেন না। বিশেষ ক্ষেত্রে সভাপতি ডাকতে পারেন। এখানে সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তাফা মহোসীন মন্টুর মিটিং ডাকার তো কোনো রাইট নেই।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে সারা দেশের নেতাকর্মীরা ড. কামাল হোসেন এবং রেজা কিবরিয়া যে দিকে আছে, সে দিকেই আছেন। গুটি কয়েক সুবিধাভোগী তাদের সঙ্গে থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে সবারই পছন্দ আছে। ড. কামাল হোসেন-রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্ব পছন্দ নাও হতে পারে। মন্টু-সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্ব পছন্দ করে সেটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। মন্টুর সঙ্গে আমরা কোনো ব্যক্তগত দ্বন্দ্ব নেই। তবে তারা দলটাকে যে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে এটা ঠিক না, এটাতে আপত্তি জানাচ্ছি।

 
Electronic Paper