ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিএনপির স্থায়ী কমিটি

শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ নেই

মাহমুদুল হাসান
🕐 ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০

চলমান পরিস্থিতিতে দলের জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনে এগুতে চাচ্ছে না বিএনপি। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পদ প্রত্যাশীদের প্রতিক্ষার প্রহর দীর্ঘ হচ্ছে। এছাড়া শিগগিরই পূরণ হচ্ছে না বিএনপির স্থায়ী কমিটির শূন্য পদগুলোও। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ, ভাইস-চেয়ারম্যান এবং নির্বাহী কমিটির ফাঁকা পদ পূরণ নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর ঘোষিত ১৯ সদস্যের নীতি-নির্ধারণী ফোরামে ১৭ জন সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। ফাঁকা রাখা হয় ১৭ ও ১৮ নম্বর। সেই সময় আলোচনায় আসে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান ও শার্মিলী রহমান সিঁথির নাম।

এর আগে থেকেই আলোচনায় থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা ও মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আবদুল আউয়াল মিন্টুর মতো প্রবীণ রাজনীতিবিদেরও জায়গা হয়নি স্থায়ী কমিটিতে। এরপর ব্রিগেডিয়ার (অব.) আ স ম হান্নান, এম কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম মারা যান।

এ ছাড়া রাজনীতি থেকে অনেকটা নীরবে অবসরে চলে যান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। ফলে দলের স্থায়ী কমিটিতে ৬টি শূন্য পদ তৈরি হয়। এর মধ্যে গেল বছরের জুনে দলের স্থায়ী কমিটিতে বেগম সেলিমা রহমান এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে অন্তর্ভুক্ত করে শূন্য পদ পূরণ করা হয়। এখনো চারটি পদ ফাঁকা রয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে আলোচনায় আছেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদু, বরকত উল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ। 

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণ নিয়ে আমাদের মধ্যে এখনো কোনো আলাপ হয়নি। এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি তিনি। এছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একই কথা বললেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। যখন হবে তখন জানতে পারবেন।

এদিকে দলীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী গত বছর মার্চে বিএনপির নির্বাহী মেয়াদ শেষ হয়েছে। সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় দল থেকে জাতীয় কাউন্সিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সরকারের নির্বাহী আদেশে বর্তমানে খালেদা জিয়া মুক্ত। কিন্তু রাজনীতি না করার শর্তে বেড়াজালে আবদ্ধ তিনি। এ ছাড়া দেশে এখনো মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাব রয়েছে। এসবের হিসাবে-নিকাশে শিগগিরই জাতীয় কাউন্সিলের নিয়ে তারা ভাবছেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, কমিটিতে আরও যেসব পদ শূন্য আছে সেগুলোও চাইলে তারা পূরণ করতে পারেন।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা-ভাইস চেয়ারম্যান এবং নির্বাহী কমিটিসহ প্রায় ৩০টি পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাসহ বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। কেউ কেউ আবার দল ত্যাগ করেছেন। দলের ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটির ফজলুর রহমান পটল, বেগম সরোয়ারী রহমান, হারুন অর রশিদ খান মুন্নু, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, জাফরুল হাসান,নূরুল হুদা, কবির মুরাদ, সঞ্জীব চৌধুরী, ওয়াহিদুল ইসলাম ও এমএ হক মারা যান।

এছাড়া বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া, গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আবু সাঈদ খোকন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক বদরুজ্জামান খসরু, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান মারা গেছেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে শফিউল বারী বাবু, আহসান উল্লাহ হাসানসহ বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। বিএনপি ছাত্র ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক পদ দুটি ফাঁকা আছে। বিএনপি যুব বিষয়ক সম্পাদকের পদটিও ফাঁকা। এছাড়া বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন, দলের কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আহমেদসহ সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মনির খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আসগর লবী ও ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল (সম্প্রতি তিনি মারা যান)। এ ছাড়া কয়েকজন পদায়ন হওয়াতে কয়েকটি পদ খালি হয়।

তবে এসব পদ কবে নাগাত পূরণ হবে তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। যদিও দলের থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম পরিচলনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, কাউন্সিল দলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার একটা অংশ, এটা গঠনতন্ত্রেও নিয়ম আছে। গঠনতন্ত্র তো দলের জন্য, জীবনের জন্যই। সে কারণে আমাদের কাউন্সিলটা যে সময় হওয়ার কথা সে সময়ে হয়নি। ভবিষ্যতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি কখন অনুকূলে আসবে, কাউন্সিল করার সুযোগ সৃষ্টি হবে সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে। কাউন্সিল হবে। বিএনপি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। এর কাউন্সিল ভার্চুয়াল বা অনলাইনে হয় না। কাউন্সিল মানে হলো ব্যাপক। প্রায় চার হাজারের মতো কাউন্সিলর আছে। ডেলিগেট আছে। কাউন্সিলে লাখ লাখ লোক সমবেত হয় এসব বিবেচনায় রাখতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বয়সের বিবেচনায় গতিশীল ভূমিকার পালন করতে পাচ্ছেন না বিএনপি স্থায়ী কমিটির নেতারা। দলীয় প্রধান কার্যত ‘গৃহবন্দি’, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে, একজন অসুস্থ, আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতের শিলংয়ে অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা চলমান। এ ছাড়া সদস্যদের মধ্যে দু-একজন বাদ প্রায় সবাই বয়সের ভারে ন্যুব্জ। ফলে তাদের পক্ষে আর মাঠের রাজনীতি সক্রিয় ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই। তারা কেবল ঘরে বসে ‘উপদেষ্টা পদ’-এ থেকে দলকে পরামর্শ দিতে পারেন। মাঠের রাজনীতিতে তরুণের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে হবে। তাই দলের নীতি নির্ধারণী ভূমিকার তাদের এগিয়ে দিতে হবে।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হবে এবং পরবর্তী জাতীয় কমিটি দায়িত্ব প্রহণ না করা পর্যন্ত এই কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে।

 
Electronic Paper