বিএনপির টার্গেট নভেম্বর
লক্ষ্য ধাপে ধাপে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়া
মাহমুদুল হাসান
🕐 ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
রাজনৈতিক স্থবির অবস্থা কাটাতে মাঠের রাজনীতিতে ফিরতে যাচ্ছে বিএনপি। আগামী নভেম্বরকে টার্গেট করে এগুচ্ছেন দলের হাইকমান্ড। এ লক্ষ্য সামনে রেখে এখন সব ধরনের প্রস্ততি নিচ্ছেন তারা। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, অঙ্গ দলগুলোর পুনর্গঠন, এমনটি জনমুখী কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার রোডম্যাপ তৈরির কাজ চলছে। লক্ষ্য, ধাপে ধাপে দাবি আদায়ের আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় সব কিছুই চলছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের মার্চ থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত রাখে বিএনপি। গত মঙ্গলবার স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হলেও দল থেকে নতুন কোনো নির্দেশনা আসেনি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী শনিবার বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হবে। এরপর সাংগঠনিক স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করা না করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, এখনো পরবর্তী কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। আগামী শনিবার স্থায়ী কমিটির মিটিং আছে। আমরা মিটিংয়ে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এর আগে কিছু বলা যাবে না। তিনি বলেন, দল পুনর্গঠন চলমান প্রক্রিয়া, দায়িত্বপ্রাপ্তরা এটা নিয়ে কাজ করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, এখন আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই। মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বের হয়ে আসছেন। স্বাভাবিক কাজ-কর্মে ফিরেছেন। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ শুরু করতে হবে। সক্রিয় কর্মসূচি প্রসঙ্গে আমির খসরু বলেন, এটা দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এ বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দলীয় কর্মসূচি ঠিক করা হবে। আসলে এটা দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। সীমিত আকারে দলীয় কর্মসূচি শুরু করবেন নাকি আরও সময় নেওয়া হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, কর্মসূচি ঠিক করবেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি। এটা নির্বাচন কেন্দ্রিক হোক আর রাজনীতি কেন্দ্রিকই হোক। তবে দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তা করতে হবে।
জানা গেছে, আগামী ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে’ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই তারা এগুচ্ছেন। এ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তারা ধাপে ধাপে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চান। হাতে এখনো দেড় মাসের বেশি সময় আছে, এ সময়ের মধ্যে তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গদলগুলো গুছানোর কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে জানান দলের একাধিক নেতা।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলসহ সব সংগঠন ঘরোয়া বৈঠকে আলোচনা করে তাদের ৮০ ভাগ কাজ শেষ করেছে। সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণে বিভিন্ন সময় আমরা দল পুনর্গঠনের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। এরমধ্যেই আমরা দল পুনর্গঠন কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।
দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ইতিমধ্যে ঘরোয়াভাবে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব সাংগঠনিক কাজ শেষ করেছি। আমাদের (বরিশাল) সব কমিটি রেডি আছে। দলের নির্দেশনা পেলেই আমি কমিটি ঘোষণা করতে পারব।
যুবদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা দৈনিক খোলা কাগজকে জানান, গত এক মাস ধরে যুবদলের ওয়ার্ড ও থানা এবং ইউনিট কমিটিগুলো পুনর্গঠন নিয়ে কাজ করেছে। তারা নিয়মিতই বৈঠক করছে। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ হবে।
সরকারের দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে দাবি আদায়ে রাজপথে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে কি বিএনপি নেতাকর্মীরা। নাকি অতীতের মধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে জিয়ে রেখে ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফিরতে হবে, সেটাই দেখার বিষয়।