ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিএনপি দোটানায় থাকলেও ভোটে যেতে চায় শরিকরা

খোলা কাগজ প্রতিবেদক
🕐 ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০১৮

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থান এখনও ধোঁয়াশে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না-দলের দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে এমন অবস্থানের কথা বললেও পরক্ষণেই আবার বলছেন এবার আর একতরফা নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। বিএনপির অবস্থান এরকম অস্পষ্ট হলেও দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকদের বেশিরভাগই নির্বাচনমুখী।

জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতসহ কয়েকটি শরিক দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির রাজনৈতিক ভাগ্যের চেয়ে তারা এখন নিজেদের ভাগ্যের কথাই বেশি ভাবছেন। সেক্ষেত্রে এসব শরিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ভেতরে-ভেতরে গোছগাছ করছেন। কেউ কেউ এমন ইঙ্গিতও দিলেন, কোনো কারণে বিএনপি আবারও নির্বাচন বয়কট করলে এসব শরিক দলকে নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেখা যেতে পারে।
বিএনপির অন্যতম জোটসঙ্গী জামায়াতের একাধিক নেতা আলাপকালে জানান, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দলের শীর্ষ নেতাদের দণ্ড কার্যকর হওয়ায় দলের নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়েছে। দলের অর্থ যোগানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা না করতে পারায় রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় রয়েছে জামায়াত। আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার এটাও অন্যতম কারণ। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে এবং নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কৌশলে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানান জামায়াতের এই নেতারা।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে। রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে ‘নিবন্ধন’ ও দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ হারানোর পরেও জামায়াত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আশা করছি আমরা ২০ দলের সঙ্গে জোটগতভাবেই নির্বাচন করবো। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রতীকের কোনো সমস্যা হবে না। আমরা স্বতন্ত্রভাবেই নির্বাচন করবো। যেই যেই আসনে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবেন সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে যে যেই প্রতীক পাবেন তা নিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
২০ দল শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিও (এলডিপি) নিজেদের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের একাধিক নেতা জানান, ৩৫ থেকে ৪০টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকাও প্রস্তুত করেছে এলডিপি। এসব সম্ভাব্য প্রার্থীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এলডিপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, এলডিপি ২০ দলের শরিক হলেও দল হিসাবে স্বতন্ত্র। সেই লক্ষ্যে দলীয়ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।
বিএনপি জোটের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি নিবন্ধিত দল। দলের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বিজেপি সবসময়ই নির্বাচনমুখী দল। আমরা কখনও বলিনি-নির্বাচনে যাব না। আমরা চাই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।’ পার্থ জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রয়াত কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে বেরিয়ে আসা নেতারা নিজেরা একত্রিত থেকে বিএনপির জোটের সঙ্গে রয়েছেন। দলের নিবন্ধন না থাকায় বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। কাজী জাফরের অনুসারী এই নেতাদের মধ্যেও ইতোমধ্যে কিছু ইস্যুতে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। কয়েক নেতা আলাপকালে জানান, বিএনপি আগামী নির্বাচনেও অংশ না নিলে সেক্ষেত্রে তাদের কেউ কেউ এরশাদের দলে ফিরে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ভাবছেন।
২০ দলের শরিক দলগুলোর কয়েকটি দলের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কটের কোনো পূর্বসিদ্ধান্ত তাদের ছিল না। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যাওয়ায় তারাও বিএনপির পথে হাঁটেন। তবে এবার আগে থেকে সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার মতো সময়-সুযোগ থাকায় আবারও নির্বাচন বয়কটের পথে হাঁটার সম্ভাবনা খুবই কম।
এদিকে একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের জোট অটুট রাখার পাশাপাশি একটি বৃহত্তর জাতীয় জোট গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে বিএনপি। বৃহত্তর জোটে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, আ.স.ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ও ড. কামাল হোসেনের গণফোরামকে সম্পৃক্ত করতে চান বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
এসব বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০ দলে কোনো অনৈক্য নেই। তবে আমরা বারবারই বলেছি, বিএনপিকে ও ২০ দলকে ভাঙতে সরকার নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। সরকার চাচ্ছে আবারও একতরফা একটা নির্বাচন করে যে কোনো মূল্যে নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে। সবাই যেহেতু সুষ্ঠু নির্বাচন চান এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা চান, সেজন্য মানসিকভাবে বৃহত্তর এই ঐক্য সৃষ্টি হয়ে আছে। সামনের দিনগুলোতে এই ঐক্য আরও দৃঢ় হবে বলে আশা ফখরুলের।

 
Electronic Paper