ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

একাদশ সংসদ নির্বাচন

গতি বাড়াচ্ছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০১৮

বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। দলটির নীতি নির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে এ বিষয়ে এখনো পরিস্কার কোনো ধারণাও পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন বিএনপি আসন্ন একাদশ জতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে।

তবে এজন্য তারা বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচনে সমান সুযোগ সৃষ্টি। শর্তগুলো পূরণ না হলে তারা নির্বাচনে যাবে কিনা সে সম্পর্কে কেউ কোনো কথা বলছেন না। বিএনপি নেতারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট করে বক্তব্য না দিলেও তাদের বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যপারেই ইঙ্গিত মেলে। অবশ্য বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেওয়ার ব্যাপারে পজিটিভ। আর দলের স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও বলেছেন, রাজনীতি অত্যন্ত গতিশীল। যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। আর সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে, সেভাবে তারা চেষ্টা চালাচ্ছে বা প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তার কাছে মনে হচ্ছে।
জানা গেছে, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সন্তুষ্ট ছিল না। খুলনা সিটির নির্বাচনের পর তারা বলেছিল গাজীপুরের নির্বাচন দেখে তারা তিন সিটি (রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট) নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। যদিও গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়েও বিএনপি সন্তুষ্ট ছিল না, তারপরও তারা রাজশাহী, বরিশাল এবং সিলেট সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এখন আবার বিএনপি বলছে তিন সিটির নির্বাচন দেখে সিদ্ধান্ত নেবে তারা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা। খুলনা, গাজীপুর ও আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য তিন সিটিতে অংশগ্রহণের ধারাবাহিকতা বিএনপি রক্ষা করলে ধরে নেওয়া যায় জাতীয় নির্বাচনেও দলটি অংশ নেবে। যদিও সিটি নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন এক নয়।
বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও তারা বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে ঢাকায় একটি হোটেলে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মানবাধিকারবিষয়ক সেক্রেটারি মাইক ক্রেমার, ফ্রান্স দূতাবাসের উপপ্রধান জ্যঁ-পিয়েরে পঁশে, ভারতীয় কূটনীতিক শান্তনু মুখার্জিসহ কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইডেন, পাকিস্তান ও ইরানের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আর বিএনপির পক্ষে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ। বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও সংস্থার প্রতিনিধিদের বলেন, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানাব, বাংলাদেশে এখন কী হচ্ছে, তা নোট করুন। আমরা একটি গণতান্ত্রিক জাতি। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, বিএনপিকে ছাড়া কোনো নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
বিএনপির ওপর নিপীড়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে শুধু এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স (গুম) নয়, আমাদের হিসাবে পাঁচ শতাধিক নেতা হারিয়ে গেছেন, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের হিসাবে ১০ হাজারের অধিক নেতা-কর্মীকে রাজনৈতিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত সারা দেশে আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলা করা হয়েছে। ১৮ লাখ মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া গত মাসের প্রথম দিকে বিএনপির তিন নেতা ভারতে গিয়েছেন, ভারতের আর্শীবাদ পাওয়ার জন্য। তিন নেতা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির। তারা ভারতের ‘থিংক ট্যাংক’ বলে পরিচিত কয়েকটি সংগঠনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন (আরজিএফ), অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ), বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন (ভিআইএফ) ও ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ (আইডিএসএ)। একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি সংবাদপত্রকে তারা সাক্ষাৎকারও দেন। বিএনপি নেতারা সবাইকে বোঝাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন থাকার সময়ে ভারত সম্পর্কে বিএনপির মনোভাব যা ছিল, তা অতীত। ভারতবিরোধিতার যে সুর তাদের মধ্যে ছিল, তা ছিল ‘ভুল ও বোকামি’। অতীতের সেই ভুল শুধরে তারা নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান, যার ভিত্তি হবে ‘পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা’।
এছাড়াও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার কাজ শুরু করেছে বিএনপি। এ ব্যাপারে দলগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিক বৈঠকও করেছে। এসব বৈঠকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে শিগগিরই মাঠে নামার প্রাথমিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঐক্য গড়ার ব্যাপারে যে দলগুলো সম্মত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল, গণফোরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও বাম গণতান্ত্রিক ধারার ৪ টি দল। হেফাজতে ইসলামের একাংশের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগস্টে বিভিন্ন ইস্যুতে একই ধরনের বিবৃতি পৃথকভাবে দেবে দলগুলো। এরমধ্য দিয়ে ঐক্য গড়ার দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু হবে। আর সেপ্টেম্বরে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করবে। পরে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট (প্রথমিকভাবে চূড়ান্ত)’ নামে নির্বাচনী জোট গঠন করবে। অক্টোবরের যে কোনো দিন এ জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান খোলা কাগজকে বলেন,  বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে পজিটিভ। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, রাজনীতি অত্যন্ত গতিশীল। যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। দেশের মানুষ এখন প্রস্তুত হয়ে গেছে মাঠে নামার জন্য। আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। উপযুক্ত সময় আসলে এমন উপযুক্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে যার ফলে এ সরকারের পতন ঘটবে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার খোলা কাগজকে বলেন, মনে হচ্ছে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। সেভাবে তারা চেষ্টা চালাচ্ছে বা প্রস্তুতি নিচ্ছে বলা যায়। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা তারই ইঙ্গিত। তবে তিনি এ কথাও বলেন, তবে নির্বাচনটা সুষ্ঠু হওয়া দরকার। নির্বাচন কমিশনের উচিত সবার জন্য সমান নির্বাচনী মাঠ তৈরি করা। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সেটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো, দেশের মানুষের জন্য ভালো।

 
Electronic Paper