ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কারা আসছেন যুবলীগে

জানেন শুধু আ.লীগ সভাপতি

সুবর্ণ অনার্য
🕐 ৯:৫৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০১৯

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে তছনছ যুবলীগের ভাবমূর্তি ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে সপ্তম কেন্দ্রীয় কংগ্রেস। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির কংগ্রেসের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করবেন যুবলীগ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি চয়ন ইসলাম। পরে বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করা হবে।

শুদ্ধি অভিযান ঝড়ের মাঝে যুবলীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি আর ৫৫ বছরের বয়সসীমার কারণে বর্তমান কমিটির ৩৫১ সদস্যের সিংহভাগই বাদ পড়ছেন নতুন কমিটি থেকে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলে যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে। রেওয়াজ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শীর্ষ দুই পদ সিলেকশন করবেন বলে দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

স্বাধীনতার পরের বছর ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। যুবলীগকে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বিবেচনা করা হয়। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুবলীগের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক নূর হোসেন ছিলেন যুবলীগকর্মী। কিন্তু আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় হাইব্রিডদের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে সংগঠনটি। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। এর ফলশ্রুতিতে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়া হয় চেয়ারম্যানের পদ থেকে। চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক এবং হারুনুর রশিদকে সদস্য সচিব করে যুবলীগের কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।

ঐতিহ্য অনুযায়ী যুবলীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারম্যানের পদটি। কয়েকটি কমিটিতে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির আত্মীয়স্বজন এই পদটিতে এসেছেন। এবারে যখন যুবলীগকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান পদে মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেন পরশ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে ফের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তার বয়স ৫১ বছর।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে চেয়ারম্যান করার চিন্তাভাবনা ছিল হাইকমান্ডের। তিনি যুবলীগের নেতৃত্বের প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করায় পরশের নাম চলে আসে।

শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যদি যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির রক্তের উত্তরাধিকারকে কাউকে এখানে চায় পরবর্তী নেতা হিসেবে, সেটা অবশ্যই যুবলীগের অধিকার আছে।’ তার এই বক্তব্যের সময়ে পরশ পাশেই ছিলেন।

চেয়ারম্যান পদে যুবলীগ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি চয়ন ইসলামের নামও জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির গুডবুকে তিনি রয়েছেন। চয়নের বাবা মাজহারুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। চাচা আবদুল খালেক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য। স্ত্রী লিলি ইসলাম রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী।

১৯৭৭ সাল থেকে তিনি যুবলীগের সঙ্গে রয়েছেন। তবে যুবলীগের যে ৫৫ বছরের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে বাদ পড়বেন তিনি। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড জানিয়েছে, দলীয় সভাপতি চাইলে চয়নের ক্ষেত্রে বয়সের শর্ত শিথিলও হতে পারে।

যুবলীগের শীর্ষ দুই নেতৃত্বের পদে আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য- ফারুক হোসেন (৫৭ বছর ১১ মাস), মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ডা. মোখলেছুর রহমান হিরু, মির্জা আজম (৫৭ বছর ২ মাস), মনজুর আলম শাহীন (৫৩ বছর ১০ মাস), মহিউদ্দিন মহির (৫১ বছর) অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন (৫৪ বছর ১০ মাস), আতাউর রহমান (৫২ বছর ৭ মাস), সুব্রত পাল (৫০ বছর ১ মাস), মো. এমরান হোসেন খান (৫৪ বছর ৮ মাস) প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, অনেকের নাম আলোচনায় এলেও শেষপর্যন্ত যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসছেন তা কেবল দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন। যুবলীগের স্বচ্ছ, গতিশীল নেতৃত্ব বাছাই তার জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এ জন্য সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই করেই যুবলীগের নেতা নির্বাচন করবেন শেখ হাসিনা।

যুবলীগের নতুন কমিটি কীভাবে গঠিত হবে সে বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যুবলীগের নেতৃত্ব বাছাই কাউন্সিলররা ঠিক করবে। তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে। তাদের সম্মতিতে পরবর্তী নেতৃত্ব আসবে। এখানে অবশ্যই আমাদের অভিভাবক সভাপতি রাষ্ট্রনায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনার মূল্যবান পরামর্শ আমরা নেব নেতৃত্বের দ্বার উন্মোচনে। এখানে কে নেতা হবেন তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’

 
Electronic Paper