কাউন্সিলের আমেজে মুখর নেতাকর্মীরা
২০-২১ ডিসেম্বর আ.লীগের সম্মেলন
হাসান ওয়ালী
🕐 ১০:২৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০১, ২০১৯
উৎসবের আমেজ বইছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে। দীর্ঘদিন পর মূল দল আওয়ামী লীগ, তিন সহযোগী এবং একটি ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের কাউন্সিল ঘিরে চাঙ্গা নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের মাঝে এ সম্মেলন নিয়ে আতঙ্কে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির সঙ্গে যুক্ত নেতারা। বিতর্কিত ও সুবিধাবাদী এ সব নেতাদের ভিড়ে এতদিন কোণঠাসা থাকা স্বচ্ছ, ত্যাগীরা এ সুযোগে লাইমলাইটে চলে আসছেন।
পদপ্রত্যাশীরা প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। দৌড়ঝাঁপ চলছে শীর্ষ নেতাদের বাসা, অফিসেও। চলতি মাসের শুরুতেই ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে কৃষকলীগের সম্মেলন। ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে শ্রমিক লীগের সম্মেলন, ১৬ই নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ২৩ নভেম্বর যুবলীগ। আর ডিসেম্বরের ২০ ও ২১ তারিখ হবে মূল দল আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন।
সূত্র বলছে, তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় সুবিধাভোগীদের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠা সংগঠনগুলোকে গতিশীল করতে চান শেখ হাসিনা। সেই লক্ষ্যে ত্যাগী ও দক্ষ নেতাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে চান তিনি। বিশেষ করে দলের মধ্যে ‘মনস্টার’ হয়ে ওদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছ, নিষ্কলঙ্কদের হাতে দিতে চান সংগঠনগুলোর দায়িত্ব। এরই মধ্যে জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের সবস্তরের নেতাদের ওপর একাধিক জরিপ চালানো হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পরিচালিত এসব জরিপের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত দলের হাইকমান্ডের কাছে জমা পড়েছে।
যেসব নেতা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের রাখা হয়েছে নজরদারিতে। এসব দুর্নীতিবাজ নেতাদের নতুন কমিটিতে না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জরিপে উঠে আসা ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের সংগঠনগুলোর মূল নেতৃত্বে আনার পরিকল্পনা চলছে।
এরই অংশ হিসেবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রায় ১৬০০ জনের একটি তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ। তালিকাটি সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলীয় সূত্র এবং গোয়েন্দা সূত্রকে কাজে লাগিয়ে এ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিতর্কিতদের যাতে অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে জন্য সতর্ক আছি। অনুপ্রবেশকারীদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দলীয় কার্যালয়ে তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে দীর্ঘদিন পরের সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
পদ-প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন শীর্ষ মহলে। ক্যাসিনোকাণ্ডে এতদিনের প্রতাপশালীরা আতঙ্কে থাকায় তুলনামূলক ক্লিন-ইমেজের নেতারা চলে এসেছেন লাইমলাইটে। এর বড় অংশই সাবেক ছাত্রনেতা। সহযোগী সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রলীগের বিগত কয়েক কমিটির কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহানগরের নেতারা পদবঞ্চিত। জাতীয় রাজনীতিতে নামতে পরিচয় সংকটে ভুগছেন তারা। আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে তাদের আশা, ছাত্রলীগ থেকে যাওয়া কারো কাঁধেই যেন দেওয়া হয় দায়িত্ব।
সরেজমিন ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ এবং ধানমন্ডি ৩-এ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে দেখা মেলে নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড়। দুপুর থেকে রাত অবধি চলে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের শোডাউন। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাসহ পদপ্রত্যাশী নেতারা অনুসারীদের নিয়ে প্রতিদিনই দিচ্ছেন শোডাউন।