ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ওয়ার্কার্স পার্টি ভাঙছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:২৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০১৯

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাশেদ খান মেননের বক্তব্য-পরবর্তী আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘আপসে’ ‘আদর্শচ্যুতি’র অভিযোগ এনে বেরিয়ে গেছেন সাত নেতা। পলিটব্যুরোর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস দল ছাড়ার পর ওয়ার্কার্স পার্টির আরও ছয় কেন্দ্রীয় নেতা দলের আসন্ন কংগ্রেস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। নেতারা নতুন দল গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফলে আবারও ওয়ার্কার্স পার্টি ভাঙছে।

বেরিয়ে যাওয়া ছয় নেতা হলেন পলিটব্যুরো সদস্য নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাকির হোসেন হবি, মোফাজ্জেল হোসেন মঞ্জু, অনিল বিশ্বাস ও তুষার কান্তি দাস।

ওয়ার্কার্স পার্টি তার সংগ্রামী ভাবমূর্তি হারিয়ে ফেলেছে উল্লেখ করে বেরিয়ে যাওয়া নেতারা বলেছেন, ‘দল জনগণ থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। পার্টি ও তার গণসংগঠন দুর্বল হয়ে পড়েছে। ১৪ দলের সঙ্গে কর্মসূচিভিত্তিক ঐক্য, হাতুড়ি ছেড়ে নৌকা মার্কায় নির্বাচন এবং সরকারে মন্ত্রিত্ব গ্রহণের মাধ্যমে পার্টির নীতি-আদর্শকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। এই ভ্রান্ত নীতির অনুসরণের ফলে পার্টির অগণিত নেতাকর্মী ও জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।’

তাদের দাবি, বরিশালের জেলা সম্মেলনে দলের কর্মী ও জনগণের দাবির মুখে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচন সম্পর্কে পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন যে সত্য উচ্চারণ করেছিলেন, পরদিন তার ইউটার্ন পার্টি অনুসৃত বর্তমান রাজনীতিরই অনিবার্য ফল।

এর আগে মতানৈক্যের কারণে গত ২২ অক্টোবর ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস। পরে লিখিত বক্তব্যের জন্য উল্টো তাকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে থাকা না-থাকা, গঠনতন্ত্রের নিয়ম উপেক্ষা করে কংগ্রেসকে সামনে রেখে পার্টিতে নতুন সদস্য করা, সম্প্রতি ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় রাশেদ খান মেননের নাম আসা, দলকে পাশ কাটিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদে নিজের স্ত্রী লুৎফুন্নেসা খানকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করাসহ নানা ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য চলে আসছে।

কেন্দ্রীয় কংগ্রেসকে সামনে রেখে এ মতপার্থক্য প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এছাড়া পার্টির নেতাকর্মীদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ। তাদের অভিযোগ- কমিউনিস্ট আদর্শভিত্তিক পার্টির যে রাজনৈতিক চরিত্র থাকা উচিত রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি তা থেকে অনেক আগেই দূরে সরে গেছেন।
আগামী ২ নভেম্বর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির চার দিনব্যাপী দশম কংগ্রেস (কেন্দ্রীয় সম্মেলন) শুরু হবে।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেলা ১১টায় কংগ্রেসের উদ্বোধন হবে। এর আগেই, পার্টির রাজনৈতিক দলিল নিয়ে দ্বিমত করে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন দলটির পলিটব্যুরোর দুই সদস্য নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদ। সবশেষ, সোমবার এই দুই পলিটব্যুরোর সদস্যসহ কেন্দ্রীয় কমিটির ছয় নেতা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কংগ্রেস বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পার্টির সব সদস্যদেরও কংগ্রেস বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ ও সাম্যবাদী দল (আলী আব্বাস) মিলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়। ১৯৯৫ সালে পলিটব্যুরোর সদস্য টিপু বিশ্বাস বেরিয়ে নতুন দল গণফ্রন্ট করেন। ২০০৪ সালের ১৪ জুন বেরিয়ে যান পলিটব্যুরোর আরেক সদস্য সাইফুল হক। বর্তমানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। তৃতীয় দফায় ভাঙন হচ্ছে ওয়ার্কার্স পার্টিতে।

 
Electronic Paper