এক সিদ্ধান্তে খুলবে জট
খালেদার মুক্তিতে সক্রিয় ঐক্যফ্রন্ট
সাইদ রহমান
🕐 ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০১৯
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ‘কিছুটা থিতিয়ে পড়া’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবার সক্রিয় হচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে। গতকাল ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এটাই ছিল মূল আলোচনা। বৈঠকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি আলোচনা করে তার সাক্ষাৎ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই এক সিদ্ধান্তে ঝুলে থাকা অনেক বিষয়ের জট খুলে যাবে শিগগিরই। এছাড়া ‘ঝিমিয়ে পড়া’ ভাব বা ‘হতাশা’ কাটিয়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে এক ধরনের চাঞ্চল্য নিয়ে আসবে এই সিদ্ধান্ত।
বৈঠকের পর ফ্রন্টের নেতা জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমাদের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। সারা জাতি আজকে উৎকণ্ঠিত যে কোনো সময়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। উনার একটা হাত অবশ হয়ে গেছে, উনি খেতে পারেন না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে একটা প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব- আমরা উনাকে দেখতে যেতে চাই, অবস্থাটা কী, এটা জানার জন্য। আমরা আবেদন করব স্যারসহ (কামাল হোসেন) জোটের সব দলের প্রতিনিধিদের যাওয়ার জন্য। অনুমতি পেলে স্যার অবশ্যই যাবেন।’
সূত্র জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদনের পাশাপাশি বিদেশি কূটনৈতিকদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে বসার ব্যাপারে ভাবছে ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি নিজেদের উদ্যোগে একাধিকবার এমন বৈঠক করলেও তার ফলাফল ইতিবাচক হয়নি। এবার ড. কামাল হোসের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট যদি এমন উদ্যোগ নেয় তাহলে দূতাবাসগুলোও নড়েচেড়ে বসবেন বলে আশাবাদ অনেকের।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রশ্নে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। জামিন প্রশ্নে দুই দলের দ্বিমুখী অবস্থানই এই জটের কারণ। আওয়ামী লীগ বরাবরের মতোই বলে আসছে, খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছেন আদালত, তাই জামিন বা মুক্তির বিষয়টিও আদালতের। তবে প্যারোলে মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করলে বিবেচনা করবে তারা। কিন্তু এমন মুক্তিতে অনীহা দেখিয়ে আসছে বিএনপি। এবার ঐক্যফ্রন্ট যেহেতু বিষয়কে তাদের প্রধান এজেন্ডা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে কর্মসূচি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সেহেতু একদিকে যেমন মুক্তির দাবিটি জোরালো হয় তেমনি সাবেক এই তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর মুক্তি নিয়ে বিদ্যমান অচলাবস্থার নিরসনও হতে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. কামাল হোসেনের মতো সর্বজন গ্রহণযোগ্য বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আইনজ্ঞ যদি সামনে থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে কর্মসূচি দেন তাহলে তার ফলাফল ইতিবাচকই হবে। সর্বোপরি বিষয়টা যেহেতু আদালতের, অভিজ্ঞ আইনবিদ হিসেবে সে দিকটাও দেখতে পারবেন তিনি। একটি দলের প্রধান হয়েও অন্য দলীয় প্রধানের মুক্তিতে নেওয়া এমন উদ্যোগ দেশের রাজনীতিতেও সৌহার্দ্যরে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
আনুষঙ্গিক নানা এজেন্ডা থাকলেও শুরু থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মূল ফোকাস ছিল নির্বাচনের দিকে। কারণ ফ্রন্টের গঠনও ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক। সাত দফা দাবির একটিতে ‘খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি’র দাবি থাকলেও সেটা তখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়নি। কারণ তারা ভেবেছিল, নির্বাচনে উৎরে গেলে এমনিতেই মুক্ত হবেন খালেদা জিয়া। সেটা যেহেতু হয়নি, কিছুটা দেরি হলেও বিষয়টিকে তাই এবার তারা ‘একমাত্র’ বিবেচনা করে কর্মসূচি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। তাতে করে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির প্রশ্নে বিএনপির যে ঢিমেতালের কর্মসূচি, সেটা ভেঙে নতুন মাত্রা পাচ্ছে আন্দোলন।
ঐক্যফ্রন্টের এই সিদ্ধান্তকে বিএনপি দেখছে তাদের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে। কারণ খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য একসঙ্গে মাঠে নামার বিষয়ে শুরু থেকেই তাদের চেষ্টা ছিল কিন্তু নানা কারণে এতদিন সেটা হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া মাঠের আন্দোলনের মাধ্যমে হোক কিংবা সরকারের সঙ্গে দরকষাকষির মধ্য দিয়ে হোক- খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ইতোমধ্যেই। তাই এবার ফ্রন্টনেতাদের সঙ্গে যূথবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে তারা মুক্ত করতে চায় দলের সর্বোচ্চ এই নেতাকে।
এটি গোপন কিছু নয় যে, সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে পর বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। সময় যত গড়িয়েছে, টানাপড়েন ততই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ নেওয়া প্রশ্নে বিএনপি ও গণফোরামের দ্বিমত ছিল আলোচনার তুঙ্গে। সম্পর্কের সেই শীতলতা তারপর আর কাটেনি। মনে করা হচ্ছে, এবার খালেদা জিয়ার মুক্তির এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে উষ্ণ হয়ে উঠবে ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক।