ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ রিজভীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৩:৫৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০১৯

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, আজ ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও ভোটারদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মহেশপুরে প্রতিটি কেন্দ্র থেকে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাঠিসোটা ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। একই অবস্থা সাতকানিয়ায়ও। এই দুই উপজেলায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুলিশও ভোটারদের বের করে দিচ্ছে।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এই দুই উপজেলায় ভোটের নামে প্রকাশ্যে ভোট জালিয়াতির উৎসব শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে অবহিত করা হলে তারা ‘দেখছি বলে’ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

রিজভী বলেন, যারা ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের নির্বাচন করে তাদের কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা অরণ্যে রোদন। নির্বাচন কমিশন সরকারের যাদুরবাক্সে পরিণত হয়েছে। তারা দিনের নির্বাচন রাতে করে এবং ভোটার তালিকায় জীবিত মানুষকে মৃত দেখায়। এই যাদুকর প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের অধীনে নির্বাচনে প্রকৃত ভোটারদের ভোট দেয়ার অধিকার নেই।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। ভোটারদের ভোট দিতে না দেয়া কি সুনীতি না? এটাতো এক মহাদুর্নীতি। পুলিশ এবং সরকারদলীয় ক্যাডারদের দিয়ে দিনে-দুপুরে ভোটজালিয়াতি করা মহাদুর্নীতি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্র রাজনীতি অপভ্রংশ অপরাজনীতি তথা সন্ত্রাস-দুর্নীতি এবং রক্তপাতের অজুহাতে সমগ্র ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেয়াটা গভীর মাস্টার প্ল্যানেরই অংশ। ছাত্র রাজনীতিকে যারা কলুষিত করেছে, মারামারি-দলাদলিকে যারা উৎসাহিত করেছে, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারে যারা মদত দিয়েছে তারাই প্রকৃত ছাত্র রাজনীতিকে মানুষের চোখে হেয় করেছে। তারাই এখন ছাত্র রাজনীতিকে বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে।

তিনি বলেন, ছাত্রসমাজ জনগোষ্ঠীর আলোকিত সম্প্রদায়, তারা আলোকদীপ্ত চোখে রাষ্ট্র ও সমাজে অনাচারগুলো চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। যুগে যুগে এই ছাত্রসমাজই অন্যায়-অসাম্য-অবিচারের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের শরীরের রক্ত ঝরিয়ে ভাষার অধিকার থেকে শুরু করে স্বাধিকার আন্দোলন ও গণতন্ত্রের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা নির্যাতিত জনগণের ভ্যানগার্ড হিসেবে রাজপথে দৃপ্তপায়ে এগিয়ে গেছে। ছাত্রসমাজের সেই মহিমামণ্ডিত ঐতিহ্য ম্লান করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী।

রিজভী বলেন, স্বাধীনতার পরপরই ব্যালটবাক্স ছিনতাই ও শহীদ মিনারে ছাত্রী লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ তাদের যাত্রা শুরু করে। তাদের উত্তরসূরীরাই বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে হলে প্রচলিত বিধিবিধানকে তোয়াক্কা না করে নিষ্ঠুর ও সর্বনাশা নির্যাতনব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের ছত্রচ্ছায়ায়।

তিনি বলেন, হলে হলে টর্চার সেল গঠিত হয়েছে। একের পর এক ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ দ্বারা শিক্ষার্থী খুনের ঘটনা ঘটছে। এর ভয়ঙ্করতম রূপ দৃশ্যমান হলো মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। তাকে মারধরের খবর পেয়ে একজন পুলিশ উপ-পরিদর্শক সেখানে ছুটে গেলে ছাত্রলীগের নেতাদের বাধার কারণে তিনি কিছু করতে পারেননি। ছাত্রলীগকে এই কয়েক বছরে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে তারা কোনো এথিকসের ধার ধারেনি। এই কদাচারের জন্য সমগ্র ছাত্রসমাজ বা ছাত্র রাজনীতি দায়ী হতে পারে না।

রিজভী বলেন, সরকারের নিকট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ তথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরঙ্কুশ আনুগত্যের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন-কানুন, বিচারের তোয়াক্কা করছে না ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন। তাদের দৌরাত্ম ও উপদলীয় হানাহানির কারণে সমগ্র ছাত্র রাজনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই তৈরি করেছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। আত্মসম্মানহীন একটি নিপীড়ক সংগঠন ছাড়া ছাত্রলীগ আর কিছুই নয়। এর জন্য বহু শতাব্দীর ‘একাডেমিক ফ্রিডম’সহ বহু মুক্তি আন্দোলন-সংগ্রামের পথিকৃত ছাত্রসমাজে ছাত্র রাজনীতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ঠিক নয়।

 
Electronic Paper