যুবলীগের সেই আনিসকে দল থেকে বহিষ্কার
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৩:১৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০১৯
যুবলীগের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা হয়। সভা শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ।
কাজী আনিসুর রহমান যুবলীগ অফিসের পিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় নেতা বনে যান। দুর্নীতি-মাদক-ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে তিনি আড়ালে চলে যান। প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা কাজী আনিসের অবস্থান নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশার। কেউ বলছেন, কাজী আনিস দেশত্যাগ করেছেন। কেউ বলছেন আত্মগোপনে আছেন।
আইনশৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কাজী আনিসুর রহমানকে খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্নীতি, মাদক আর চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে র্যব-পুলিশের অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন কোটিপতি এই নেতা। যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর লাপাত্তা কাজী আনিস।
যুবলীগ নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, কাজী আনিস কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যালয়ে পিয়ন হিসেবে যোগ দেন ২০০৫ সালে। বেতন ছিল মাসে ৫ হাজার টাকা। সাত বছর পর বনে যান কেন্দ্রীয় যুবলীগের দফতর সম্পাদক। যুবলীগের সবশেষ কমিটিতে তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদ দেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব।
২০০৫ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যখন আনিসের চাকরি হয়, তখন তিনি নেতাদের হুট ফরমায়েশ শোনার পাশাপাশি কম্পিউটার অপারেটরের কাজও করতেন। এই সুবাদে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি কার্যালয়ে আসা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও সখ্য হয় তার। সময়ের ব্যবধানে প্রযুক্তিকে পিছিয়ে থাকা নেতাদের নজরেও চলে আসেন আনিস।
কেন্দ্রীয় যুবলীগ সারা দেশে যেসব কমিটি দিত, সেগুলো কম্পিউটারে টাইপ করে দিতেন আনিস। টাইপ করতে গিয়ে কোন জেলায় কে সভাপতি কে সম্পাদক তা নখদর্পণে চলে আসে আনিসের। মুখস্থ বলে দিতে পারতেন যেকোনো কমিটির নেতার নাম। এসব কারণেই চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তিনি। আবার জেলাপর্যায়ের নেতারাও কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রের তথ্য বা সিদ্ধান্ত জানতে তাকে ফোন করতেন। এভাবে জেলা নেতাদের সঙ্গেও তার সখ্য হয়ে যায়।
২০১২ সালে যুবলীগের কমিটি হলে আনিস পেয়ে যান উপ-দফতর সম্পাদকের পদ। শীর্ষ নেতার আশীর্বাদ থাকায় ছয় মাস পর খালি থাকা দফতর সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেয়ে যান আনিস।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনিসকে সবাই ‘ক্যাশিয়ার’ বলেই চেনে। তবে গত এক যুগে তিনি শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কিছু যুবলীগ নেতার সব ধরনের অপকর্মের সঙ্গী এই আনিস।
ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর সড়কে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে আনিসের। তবে ওই ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন না। বর্তমানে রাজধানীর ধানমণ্ডির ১০/এ সড়কের একটি বাড়ির ফ্ল্যাটে থাকেন কাজী আনিস। ওই ফ্ল্যাটটিও তার নিজের।
যুবলীগের ৭ম কংগ্রেস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠক শুরু হয় বেলা ১১ টায়। এ বৈঠকে যোগ দেননি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে কাজী আনিসের বহিষ্কার অন্যতম।
জাতীয় কংগ্রেসের আগে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে সংগঠনটির অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন না যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে গ্রেফতার যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে তার সখ্যের তথ্য উঠে আসে। তার মদদে রাজধানীতে অনেক যুবলীগ নেতা ক্যাসিনো ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ উঠে। এছাড়া তার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। তলব করা হয়েছে ব্যাংক হিসাব। এর পর থেকে রাজনীতি থেকে অনেকটাই আড়ালে চলে যান ওমর ফারুক। তার বিষয়ে আজকের সভায় আলোচনা হয়। সভা শেষে যুবলীগ নেতারা বলেন, যুবলীগ চেয়ারম্যানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ।
উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, শেখ শামসুল আবেদীন, আলতাব হোসেন বাচ্চু, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরণ, আবদুস সাত্তার মাসুদ, মো. আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আলী খোকন, অধ্যাপক এবিএম আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, ইঞ্জি. নিখিল গুহ, শাহজাহান ভূঁইয়া মাখন, ডা. মোখলেছুজ্জামান হিরু, শেখ আতিয়ার রহমান দীপু প্রমুখ।