খালেদার জামিনে দ্বিমতই বাধা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০১৯
সিদ্ধান্তের ভার আ.লীগ ছেড়ে দিয়েছে আদালতের ওপর। প্যারোল আবেদনে বিবেচনার দরজা খোলা রেখেছে। এমন মুক্তিতে অনীহা বিএনপির
একই পথে আওয়ামী লীগ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন কিংবা প্যারোলে মুক্তি ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগের অবস্থানেই আছে। চেয়ারপারসনের জামিনের ব্যাপারে বিএনপি নেতারা কখনো আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন আবার কখনো আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা খালেদা জিয়ার জামিন কিংবা মুক্তির পথ আগেই দেখিয়ে দিয়েছেন এবং এখনো তাই বলছেন। খালেদা জিয়ার জামিন কিংবা মুক্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা একাধিকবার বলেছেন, খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছেন আদালত।
জামিন কিংবা মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতাও আদালতের। আর বিএনপি যদি খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে তাহলে সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে। তা ছাড়া নিজের অন্যায় স্বীকার করে যদি খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাহলে রাষ্ট্রপতি বিবেচনা করে দেখবেন যে, বিষয়টি কি করা যায়। কিন্তু বিএনপি তা করছে না। তারা রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার হুমকি দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো কিছু করার নেই। কেননা শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ গত এক যুগ ধরে স্বাধীনতা ভোগ করছে।
তারা আরও বলছেন, যদি আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে কোনো কথা বলে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার জামিন হয় তাহলে এ প্রশ্ন ওঠাও অস্বাভাবিক নয় যে, সরকারের ইঙ্গিতেই খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। আইনের দৃষ্টিতে যারা অপরাধী আদালত তাদের সাজা দেবেন এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আর আদালত যদি কাউকে নির্দোষ মনে করেন তাকে জামিন কিংবা খালাস দিতে পারেন। এখনে কোনো দলের কিছু করার নেই। যে দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে তা এ সরকারের আমলে দায়ের করা হয়নি। মামলা দুটি হয়েছে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। দুর্নীতির কারণে বিগত সরকার এ মামলা দুটি করে। আর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলা দুটির বিচার করতে সময় লেগেছে ১০ বছরের বেশি। সুতরাং আদালত স্বাভাবিক গতিতেই তার বিচার কাজ শেষ করেছেন। আর আসামিকে আদালত কি সাজা দিবেন এটা আদালতের একান্তই নিজস্ব এখতিয়ার।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান এবং সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। তখন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে দলের (আওয়ামী লীগের) সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বেশি কথাবার্তা না বলার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে দলীয়প্রধান বলেন, কোনো উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলবা না। তার (খালেদা জিয়া) বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ নয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির এমপিদের অনুরোধের বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি। তিনি খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
জানা গেছে, দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়া গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি। চলতি বছরের ১ এপ্রিল তিনি অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি হন। এখনো তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন।
আন্দোলন না করাই বিএনপির ভুল
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দির ২০ মাস পূর্ণ হয়েছে গত মঙ্গলবার। দলীয়প্রধান কারাবন্দি হওয়ার পর ২০ মাস পার হলেও তাকে মুক্ত করার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা এখনো কঠোর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি।
খালেদা জিয়াকে কোন পথে মুক্ত করার চেষ্টা চালানো হবে- আইনি লড়াই, প্যারোল, রাজপথে আন্দোলন নাকি অন্য কোনো উপায়ে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না দলটির শীর্ষ নেতারা। আর সেই সুযোগটি পূর্ণভাবে ব্যবহার করছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে বিএনপি কি ভুল পথে হাঁটছে।
বিএনপি নেতারা কখনো বলছেন আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে, কখনো বলছেন রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুক্ত করা হবে। আবার কখনো খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। গত ২০ মাসে বিএনপি নেতারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বললেও খালেদা জিয়াকে তারা কারামুক্ত করতে পারেননি। বরং জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলার নিম্ন আদালতের সাজা ৫ বছরের পরিবর্তে হাইকোর্টে ১০ বছর হয়েছে। আর চ্যারিটেবল মামলায় ৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপি নেতারা আরও বলছেন, যে মামলায় খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে দুটি মামলায়ই খালেদা জিয়া হাইকোর্টে জামিন পাওয়ার উপযোগী। অনেক সময় হত্যা মামলার আসামিরাও হাইকোর্ট থেকে জামিন পাচ্ছেন কিন্তু খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। কারণ তিনি (খালেদা জিয়া) একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান। এ জন্য সরকার তাকে জামিন দিতে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আদালত স্বাধীন। যে মামলা দুটিতে খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে তা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আর সাজা দিয়েছেন আদালত। এখানে তাদের কিছুই করার নেই। তবে প্যারোলের মুক্তির ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্যারোলে মুক্তি চেয়ে খালেদা জিয়া যদি সরকারের কাছে আবেদন করেন তাহলে সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে। কিন্তু প্যারোলের আবেদন করলে সরকার যে তাকে মুক্তি দিবে এরকম কোনো আশ্বাস সরকারের পক্ষ থেকে না পাওয়ায় বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করছেন না। আর বিএনপি নেতারাও বিভিন্ন সময় বলেছেন খালেদা জিয়া বলেছেন- তিনি প্যারোলে মুক্তি চান না। জামিন পাওয়া তার হকদার, তিনি জামিনে মুক্তি চান।
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদসহ তিন এমপি। পরে বেরিয়ে এসে হারুন বলেন, খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হলেন তিনি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাবেন। বিষয়টি পরের দিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও জানান হারুন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো সবুজ সংকেত মেলেনি।
পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন- বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারও অনুকম্পায় মুক্তি চান না। আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া জামিন না পেলে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাকে মুক্ত করা হবে। আর বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপি এমপিরা ধরা খেয়েছেন। তারা খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য সরকারের অনুকম্পা চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ভুলে গেছেন যে খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী।
জানা গেছে, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপি নেতারা বলে আসছেন খালেদা জিয়াকে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে। যদি আইনি লড়াইয়ে ব্যর্থ হন তাহলে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে জামিন করা হবে। কিন্তু তারা এখনো খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সক্ষম হননি। তিনি এখনো কারাগারে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে বিএনপি নেতারা সরকারের উদ্দেশ্যে এরকম একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিলেও রাজপথে সে সফলতা দেখাতে পারেননি। খালেদা জিয়া আগে থেকেই বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত। বয়স্ক মানুষ হওয়ায় মাঝে মধ্যেই রোগগুলো বেড়ে যায় এবং তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যে কারণে দলের নেতাকর্মীরা কিংবা স্বজনরা মাঝেমধ্যেই তার সঙ্গে দেখা করার পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলেন জানান।
তখন বিষয়গুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য মাঝেমধ্যে আবেগী হয়ে পড়েন। কখনো সরকারের কাছ ধরনা দেন, কখনো আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার হুমকি দেন আবার কখনো আদালতকে দোষারোপ করেন এই বলে যে, খালেদা জিয়াকে সরকারের ইঙ্গিতেই আদালত সাজা দিয়ে বন্দি করে রেখেছেন।