ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাঁড়াশি অভিযানে তছনছ যুবলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে দলের দুর্নাম হচ্ছে, আর এ দুর্নাম কোনো ক্রমেই মেনে নিতে নারাজ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাই দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। বিগত উপজেলা নির্বাচনে যারা দলে প্রার্থীর বিরুদ্ধে, নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন প্রথমে এমন দেড় শতাধিক নেতাকে কেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না তার কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়, এরপরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে চাঁদা দাবি করা ছাত্রলীগে শীর্ষ দুই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন।

ছাত্রলীগ নেতাদের যখন বহিষ্কার করা হয় তখন যুবলীগের কিছু নেতা এদের (ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক) চেয়েও খারাপ বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর যুবলীগের দুর্নীতিবাজ নেতাদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। যুবলীগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর একসপ্তাহ না পেরুতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদ খালেদ মাহমুদ ভূইয়া র‌্যাবের হাতে আটক হন। বর্তমানে খালেদ সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। এরপর শুক্রবার রাজধানীর নিকেতন থেকে আটক করা হয় যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীমকে। পরে গতকাল রাতেই ধানমন্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ঘিরে অভিযান চালায় র‌্যাব।

হেফাজতে নেয় কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের চেয়ারম্যান শফিকুল আলম ফিরোজকে। যুবলীগ নেতাদের বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক সাঁড়াশি অভিযানে নেতাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে যুবলীগের দুর্নীতিবাজ অনেক নেতা ইতোমধ্যে ঘা ঢাকা দিয়েছেন। দলের কর্মকাণ্ডেও তাদের উপস্থিতি কমে গেছে। যে কারণে দলীয় কর্মকাণ্ডে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। যুবলীগের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হতে না হতেই তছনছ হয়ে পড়েছে সংগঠনটি কার্যক্রম।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র বলছে, দলের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এখানে কে আওয়ামী লীগের, কে যুবলীগের আর কে ছাত্রলীগের বা কে অন্য কোনো সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠনের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তা দেখছেন না। তার টার্গেট দুর্নীতিবাজদের শিক্ষা দিয়ে দলের ভাবমূর্তি ফেরানো। দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে তিনি কঠোর এই পথটি বেছে নেন।

আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অভিযান চলতে পারে। যুবলীগের কারা দখল-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-অস্ত্রবাজি-ক্যাডারবাজি করছে, সারা দেশের যুবলীগের এমন ৫০০ নেতাকর্মীর তালিকা এখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা প্রমাণসহ এ তালিকা জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে যুবলীগের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা অস্ত্রবাজি করেন, ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান। এসব বন্ধ করুন। নইলে যেভাবে কঠোরভাবে জঙ্গি ও মাদক ব্যবসায়ীদের দমন করা হয়েছে, একইভাবে এই অস্ত্রবাজদেরও দমন করা হবে। পাশাপাশি দলীয় ও সরকারের দায়িত্বশীল পদে যারা আসীন আছেন, তাদেরও আত্মঅহমিকা ও ক্ষমতার জোরে দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এই কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে, ওই বৈঠকে যুবলীগ প্রসঙ্গে আলোচনার অবতারণা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক। বৈঠকের এজেন্ডায় উল্লেখ থাকা শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি যুবলীগের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শনিবার যুবলীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা করেছিল। তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিসের টাকা বৈধ করতে মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে? চাঁদাবাজির টাকা বৈধ করতে মিলাদ মাহফিল!’ নিজের জন্য এমন মিলাদ মাহফিল তিনি চান না। শেখ হাসিনা আরও বলেন, যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। এসব বন্ধ করতে হবে।

যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে বের হননি, অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিবাদ করেননি। যখন দলের দুঃসময় ছিল, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে দলের পক্ষে অবস্থান নেননি। এখন টানা তিনবার সরকারে আছি। অনেকের অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু আমার সেই দুর্দিনের কর্মীদের অবস্থা একই আছে।’

ছাত্রলীগের সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে তুলনা করে যুবলীগের কিছু নেতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা আরও খারাপ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা (ঢাকা মহানগর যুবলীগের একটি অংশের সভাপতি) ক্রসফায়ার থেকে বেঁচে গেছেন। আরেকজন (মহানগর দক্ষিণের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক) এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, শুধু যুবলীগ বা ছাত্রলীগের প্রশ্ন নয়, আওয়ামী লীগেরও যারা অনিয়ম দুর্নীতি করবে তাদের সবাই একই পরিণতি ভোগ করবে। দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে শুদ্ধি অভিযান চলছে। সারা দেশের যেখানেই দুর্নীতি বা অনিয়ম হবে সবখানেই শুদ্ধি অভিযান চলবে।

প্রশাসন বা রাজনীতির কেউ যদি জুয়ার ব্যবসায় মদদ দিয়ে থাকে তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো গডফাদার ছাড় পাবে না বলেও মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী। সহযোগী সংগঠনগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ বিব্রত কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই পদক্ষেপের কারণে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে গেছে। এর ফলে সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হচ্ছে।

 
Electronic Paper