ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ছাত্রলীগের বার্তা

ছাত্ররাজনীতি নেবে কি

হাসান ওয়ালী
🕐 ১০:৫২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯

ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের বেপরোয়া হয়ে ওঠার চিত্র চিরচেনা। নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ততা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে বেশ আগেই। এ ‘স্বাভাবিক’ ঘটনায় ছেদ ঘটিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। ছাত্রলীগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটল। প্রশ্ন উঠছে, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের এ বার্তা ছাত্ররাজনীতি নেবে কি?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে অভিযোগে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটা গুরুতর। শুধু পদচ্যুতিতেই কি তাদের অপরাধের ক্ষমা হয়ে যাবে। কেননা, চাঁদাবাজি একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কেন মামলা হবে না? আবার এ দোষে যদি তাদের শাস্তি হয় তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে কেন তদন্ত করা হবে না।

সূত্র বলছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদা দাবি, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থের বিনিময়ে কমিটি করাসহ নানা অভিযোগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর গণভবনে দলের এক বৈঠকে ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠে না।’

এ সময় ওই বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ছাত্রলীগ নেতাদের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশে নিমিষেই কোণঠাসা হয়ে পড়েন প্রতাপশালী সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন শীর্ষ নেতাদের দরবারে। নানা মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা। নির্দেশের ঠিক এক সপ্তাহ পরে শনিবার রাতে পদত্যাগ করেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। চলতি কমিটির অবশিষ্ট ১০ মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, গণমাধ্যমে প্রচারিত না হলেও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পাওয়া অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সরিয়ে দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের অনিয়মে জড়ানোর আগে নতুন করে ভাবতে হবে। প্রায় নিয়মে পরিণত হতে যাওয়া বিশৃঙ্খলা নিয়মে আসবে। তবে এর জন্য ক্ষমতাসীন নেতাদের নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ছাত্রনেতাদের ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি। তাদের মতে, বিভিন্ন নেতার স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করতে গিয়ে লোভে জড়ান ছাত্রনেতারা।

এ প্রসঙ্গে ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুশতাক আহমেদ খোলা কাগজকে বলেন, ‘ছাত্রলীগকে যারা গাইড করেন তাদের মধ্যেই সমস্যা আছে। যারা তাদের গাইড করেন, তাদের গোড়াতেই তো গলদ। ছাত্রনেতাদের কাজ তাদেরই করতে দিতে হবে। তারা শুধু পরামর্শ দিতে পারেন। আর প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। যে যেই দলই করুক, অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তারা যদি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে থাকে, তাহলে তো আর কিছু হবে না। তারা ডাকসুতে আছে। ডাকসুর নাম ভাঙিয়ে আরও অনেক কিছু করতে পারে।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে ছাত্রলীগকে অংশ দিতে হবে- এটা কবে থেকে চালু হলো? নিশ্চয়ই অনেক আগে থেকে চালু হয়েছে। এবার শুধু টাকার পরিমাণটা বেশি ছিল বলেই হয়তো নজরে এসেছে। দেশের ছাত্ররাজনীতি আজ কলুষিত। ছাত্রদের স্বার্থ নিয়ে তারা কাজ না করে সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। ছাত্ররাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে হলে ছাত্র সংগঠনগুলো যেন কোনোভাবেই প্রশাসনের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে। এর দায়িত্ব যেমন প্রধানমন্ত্রীর আছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও আছে।’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নব্বই দশকের পর থেকেই হারাতে থাকে ছাত্ররাজনীতির ঐতিহ্য, খসে পড়তে থাকে গৌরবের পালক। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা শিক্ষাঙ্গন ও পাড়া-মহল্লা, নগরে-বন্দরে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, দরপত্র ছিনতাই, ঠিকাদারি বেচা-কেনাসহ নানা অপরাধে মেতে ওঠে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ভয়াবহ রূপ নেয় ছাত্ররাজনীতি।

এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের ইতিহাসের প্রতিটি উজ্জ্বল পর্বে ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা স্মরণে রেখে সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর পরামর্শ তাদের।

 
Electronic Paper