ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আ.লীগের রাজু কাঁদলেন অন্যদেরও কাঁদালেন

জাপাকে রংপুর-৩ আসন ছেড়ে দিল ক্ষমতাসীন দল

শফিক হাসান
🕐 ১০:২২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯

অবশেষে রংপুর-৩ আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছে আওয়ামী লীগ। নানা দোলাচল ও অনিশ্চয়তার পর সোমবার অশ্রু বিসর্জন দিয়ে আসনটির মায়া ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। তিনি কাঁদলেন, কাঁদালেন রংপুরের কর্মী-সমর্থকদের।

বস্তুত, জাতীয় পার্টিকে (জাপা) সমর্থন দিতেই এ উপ-নির্বাচন থেকে সরে গেল আওয়ামী লীগ। গতকাল নিজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও দলটির রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিনের অফিসে গিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন রাজু।

এরপর উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রেজাউল করিম রাজুকে কাঁদতে দেখা যায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ঢাকায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি সংকটাপন্ন, এখানে রাজনীতি করতে হলে বুঝে-শুনে করতে হবে। আমি তোমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলাম, আমি তোমাকে বলছি, দেশ ও জাতির স্বার্থে তুমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার কর।’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি। রংপুর সদর আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী না থাকলেও উন্নয়নের দায়-দায়িত্ব আমার বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

দলীয় আদেশ পালন করতে বাধ্য হলেও রাজু এ পশ্চাৎপসরণ মেনে নিতে পারেননি। মানতে পারেননি স্থানীয় নেতাকর্মীও। এর আগে সোমবার বিকাল ৩টা থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী-সমর্থকরা রংপুরের কাচারিবাজারের মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। রাজুকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধা দেন তারা। নেতাকর্মীদের মাঝে প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন রাজু। পরে নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার বিরোধিতা করে এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান বলেন, সবাই যখন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত, ঠিক এমন সময় খবর এলো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীরা যে উচ্ছ্বাস নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিল, তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে গেল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিশ্চিত করে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সাহতাব উদ্দিন বলেন, রংপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম রাজু নিজে এসে আমার কাছে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন জমা দিয়েছেন। বৈধ প্রার্থী ছিলেন তিনি। ফলে এ আসনে এখন মহাজোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে শুধু জাপার রাহগির আল মাহি (সাদ এরশাদ) প্রার্থী থাকছেন।

এ আসনে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন- বিএনপির রিটা রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ার, এনপিপির শফিউল আলম, গণফ্রন্টের কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল।

এরশাদের পৈতৃক এলাকা রংপুরে গত তিনটি নির্বাচনে মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে আসছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরশাদের মৃত্যুর পর নৌকার প্রার্থী রাখতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের চাপ ছিল প্রবল। শেষ পর্যন্ত রাজনীতির চুলচেরা হিসাবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ পিছু হটলেও বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেননি স্থানীয়রা। এর প্রভাব আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আগামীতেও পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ইতিপূর্বে জাপাকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, আমরা মাঠের অবস্থা বিবেচনা করছি। অবশ্য জাতীয় পার্টিকে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের বিবেচনা আছে। গত রোববার জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন সরকার এ আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেবেন বলে। এ আসনে বিপুল ভোটে জাপা জয়লাভ করবে এ ধারণাও প্রকাশ করেছিলেন রাঙ্গা।

তবুও কি নির্বাচন নিষ্কণ্টক হয়েছে এ আসনে জাপার প্রার্থী সাদ এরশাদের জন্য? প্রশ্ন রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রংপুর সিটি করপোরেশন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সাদ এরশাদ প্রশ্নে অনীহা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ার ইতিপূর্বে ছোটভাই সাদ এরশাদকে আশীর্বাদের বদলে ‘অভিশাপ’ দিয়েছিলেন। ভাবির সঙ্গে মতানৈক্যে জড়িয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সাদকে প্রার্থী দিয়েছিলেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

রংপুরের এ আসন বরাবরই আওয়ামী লীগের জন্য অধরা ছিল। অন্যদিকে গতকালের ঘটনা প্রমাণ করেছে, জাপায় দলীয় শৃঙ্খলা না থাকলেও সেটা রয়েছে আওয়ামী লীগে। রাজুর মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং প্রত্যাহার পরবর্তী ঘটনায় সেটাই প্রমাণিত হলো আবার।

 
Electronic Paper