রুমিনকাণ্ডে বিব্রত বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:২৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৯
প্লট দিলে ‘চিরকৃতজ্ঞ’ থাকব, ‘আপনার বিশ্বস্ত’ রুমিন ফারহানা। এই জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে সরকারের কাছে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ চাওয়ায় নিজের দল বিএনপির মধ্যেই ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এই এমপি। গত ৩ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বরাবর প্লট বরাদ্দের ওই আবেদন করেন তিনি। এটি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় গত ২৫ আগস্ট। এরপর সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা দলের কৌশল হিসেবে প্রকাশ্যে রুমিনের বিরুদ্ধে বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা না বললেও ভিতরে ভিতরে তারা এমন কাণ্ডে ব্যথিত, বিব্রত ও ক্ষুব্ধ। কিন্তু দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা রুমিনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ব্যাপক সমালোচনা করেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রুমিন ফারহানাকে নিয়ে বিএনপির মধ্যম সারির এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা ব্যাপক সমালোচনা শুরু করেন। বিএনপি মধ্যম সারির নেতাদের ক্ষোভ যখন ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল তখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে নির্দেশ দেন, প্লটের আবেদন প্রত্যাহার চেয়ে ফের আবেদন করার জন্য। এরপরই রুমিন প্লট নিয়ে তার আবেদন প্রত্যাহার চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর কাছে ফের আবেদন করেন বলে দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে।
প্রকাশ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন- রুমিন কোনো অন্যায় করেনি, রুমিন সরকারের কাছে নয়, রাষ্ট্রের কাছে প্লট চেয়েছে। এতে দোষের কি আছে। যদিও রুমিন ফারহানার প্লটকাণ্ডের পর দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তার প্রতি বিশ্বাসের জায়গাটা দুর্বল হয়ে যায়।
রুমিনের প্লট বরাদ্দ চেয়ে আবেদনটি ভাইরাল হওয়ার পর সাবেক ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবকদল নেত্রী মুন্নি চৌধুরী তার ফেসবুকে লিখেন, ‘ভদ্রমহিলা মনোনীত সাংসদ হয়েই শপথ নিয়ে বললেন এ সংসদ অবৈধ। তাহলে তো সোজাসাপ্টা প্রশ্ন আপনি অবৈধ সন্তান হতে এত আগ্রহী কেন? মুখে খই ফোটা রমণী আপসে পোষ মানলেন কী কারণে? এ সবাই জানে। সবাই বোঝে। আসলে, যেখানে ফেলো কড়ি, মাখো তেল সেখানে।’ তিনি লিখেছেন, ‘সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে কে থাকে? লুটপাট করার অভিযোগ খালি একতরফা হবে এটা কি কোনো কাজের কথা? তারচেয়ে ছেড়ে দে মা লুটপাট করে খাই।’ মুন্নি আরও লিখেন, ‘হাইকমান্ড বলে উনি নাকি বিশাল মেধাবী। আরে ভাই বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে আমরাও কম জানি না। দলে অনেক মেধাবী নারী নেত্রী ছিল তাদের কি যোগ্যতা কম ছিল সংসদে কথা বলার? কথায় আছে না পুরান পাগলে ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানি।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক ও মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা বলেন, রুমিন সংসদে যোগ দিয়ে আমাদের নেত্রীর মুক্তি চেয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছে তাতে দলের নেতাকর্মীরা কিছুটা হলেও উজ্জীবিত হয়েছিলেন। কিন্তু সংসদে যোগ দেওয়ার মাত্র দুই মাসের মাথায় এ অবৈধ সরকারের কাছে এতটা তড়িঘড়ি করে নিজের সুবিধার জন্য প্লটের আবেদন করাতে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। আমরাও বিব্রত।
দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও সিনিয়র নেতারা মাথা ঠাণ্ডা রেখে মিডিয়ার সামনে রুমিন সম্পর্কে ইতিবাচক বক্তব্য রেখেছেন। যদিও তারা বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। গত ২৫ আগস্ট রুমিনের প্লটের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বিএনপির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছিলেন, আমি নই, বিএনপির যারা মুখপাত্র আছেন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলবেন। কথা তাদের বলতেই হবে। ব্যাখ্যা দিতেই হবে। কিন্তু এর কয়েক দিন পরে তিনি বলেছেন, ব্যক্তিগতভাবে হয়তো তিনি (রুমিন) চেয়েছেন। মন্ত্রীও সেটা ফায়দা লোটার জন্য প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা সরকারের কাছে প্লট চেয়ে কোনও অন্যায় করেননি। ফেসবুকসহ পত্রপত্রিকাতে ড্রাম বাজিয়ে রুমিনের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। রুমিন কোনও অন্যায় করেনি।
তিনি আরও বলেন, হতে পারে বিষয়টি তার জন্য আন-ইথিক্যাল হয়েছে। কিন্তু রুমিন জোর গলায় পার্লামেন্টের ভেতর-বাইরে সবখানেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। সুতরাং আমাদের এই চিন্তাভাবনার লোক যারা আছেন তাদের অনুরোধ করবো, দয়া করে আপনারা তার বিরুদ্ধে বা অন্য কারও বিরুদ্ধে কোনও কমেন্ট করবেন না।
জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম বরাবর প্লট চেয়ে রুমিন আবেদনে লিখেছেন, ঢাকাস্থ পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় তার ১০ কাঠার প্লটের প্রয়োজন। ঢাকা শহরে তার কোনো জায়গা/ফ্ল্যাট, জমি নাই। ওকালতি ছাড়া তার অন্য কোনো ব্যবসা/পেশা নেই। তার নামে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দের জন্য ব্যবস্থা করে দিলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আপনার বিশ্বস্ত রুমিন ফারহানা। পরে গত ২৭ আগস্ট প্লটের আবেদন প্রত্যাহার করা চিঠিতে রুমিন ফারহানা লিখেছেন, ‘আমার দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রাণ তৃণমূলের নেতাকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের অনুভূতির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়ে গত ৩ আগস্ট, ২০১৯ তারিখ সংসদের দাপ্তরিক ফরম্যাটে করা আমার পূর্বাচলের প্লটের আবেদনটি আমি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, প্রথমত এটা হলো রাষ্ট্রীয় সুবিধা, সরকারি সুবিধা নয়। রাষ্ট্র প্রদত্ত। আমি জানি, তারা আমায় এক সুতাও জমি দেবেন না, এটা জেনেই আমি আবেদন করেছি। আমি দেখতে চেয়েছি, তারা আসলে কি করে।