ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অর্থনৈতিক লাইন বদলালেও লক্ষ্যচ্যুত হয়নি আ.লীগ

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৩৬ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০১৯

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি চারবার অর্থনৈতিক লাইন পরিবর্তন করে। নানা বাতারণে অর্থনীতিকে ব্যাখ্যা, সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যবর্তী অবস্থান এবং কখনোবা সমাজতান্ত্রিক পন্থাকে অবলম্বন করেছে দলটি। মূলত স্বাধীনতার পর দলটি রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে সমাজতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হয়। আবার এ দলই ৮০-এর দশকের শেষের দিকে মুক্তবাজার অর্থনীতিকে অর্থনৈতিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করে। রাজনৈতিক অর্থনীতিকরা বলছেন দলটি যতবারই অর্থনীতির দর্শন বদল করুক মূল জায়গা সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি সে লক্ষ্য থেকে কখনো বিচ্যুত হয়নি। ফলে স্বাধীনতা অর্জন এবং সর্বশেষ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেও সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও বৈষম্য কমানোর নীতিগুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে তাদের সরকারে।

মোটাদাগে দেশের প্রাচীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রথম পর্বে মুসলিম জাতীয়তাবাদ পরের পর্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং তারপর সমাজতান্ত্রিক ধারাকে যুক্ত করে মধ্যপন্থা গ্রহণ করে। এ ধারা অব্যাহত ছিল ১৯৭২ সালের আগ পর্যন্ত। এ সময়টিতে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র দলটির মূলনীতিতে পরিপূরক হিসেবে গ্রন্থিত হয়েছে। এরপর স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কার্যকরের জন্য কাজ শুরু করে। এরই ধরাবাহিকতায় দলটিকে দেখা গেছে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে বড় বড় কল-কারখানা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করতে। এ সময় আওয়ামী লীগসহ সব দলের অবলুপ্তি ঘোষণা করে ‘কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ (বাকশাল) প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে দলটির প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরবর্তীতে অন্যান্য নেতাদের হত্যার মধ্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যাত্রাকে থামিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে এসে দলটি আবার স্বাধীনতা-পূর্ব মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। আশির দশকে এসে মুক্তবাজার অর্থনীতিতেই লক্ষ্য স্থির করে।

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের এই লক্ষ্য বদলকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গণমানুষের কল্যাণের জন্য সর্বোত্তম পন্থাটি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। তার মতে আওয়ামী লীগ একটি ‘প্রাগমেটিক’ পার্টি। যখন যেটা প্রয়োজন সেটা গ্রহণ করেছে। এর ফলে কৃষক ও উৎপাদনের সঙ্গে মানুষ প্রাধান্য পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও সে কথা বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্যে বলেছেন। খোলা কাগজকে তিনি বলেন, সমাজতান্ত্রিক লাইন থেকে আওয়ামী লীগ যখন সরে আসে তখনও দলটি মূল বিষয় থেকে বিচ্যুত হয়নি। ফলে আওয়ামী লীগ বার বার ক্ষমতায় এসেছে।

স্বাধীনতা-পূর্ব আওয়ামী লীগ স্বাধিকার আন্দোলনের সব কর্মসূচি পালন করেছে মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিকে লক্ষ্য করে। স্বাধীনতার পর সে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, সে সময় মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ ছিল না। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও পরিবর্তিত বৈশ্বিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ দর্শন পরিবর্তন করেছে। রাজনৈতিক দলের দর্শন মানুষের কল্যাণ ও মুক্তির চিন্তা থেকে আসে উল্লেখ করে তিনি খোলা কাগজকে বলেন, দর্শন কোনো পার্টি-বাটি নয়। আওয়ামী লীগ দর্শনে পরিবর্তন আনার ফলও পেয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালীন গড়ে ১ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। দেশকে বিশ্বায়নের সঙ্গে যুক্ত করেছে। তার ভাষায় আওয়ামী লীগ মুক্তবাজার অর্থনীতিকে গ্রহণ করলেও পুরোপুরি মুক্তবাজার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষে নয়। এখনো অনেক কিছু আছে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। আওয়ামী লীগও সেটা করছে। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা ও অর্জিত প্রবৃদ্ধি পরিবর্তিত নীতি গ্রহণের অন্যতম অর্জন।

দেশের রাজনীতি এখন অনেকটাই ব্যবসায়ীদের দখলে। সব দলেই একই অবস্থা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগই সাধারণ মানুষের মুক্তি, তথা দরিদ্র শ্রেণির জন্য কর্মসূচি বজায় রেখেছে। প্রস্তাবিত বাজেটেও আওয়ামী লীগ বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, গ্রামে অর্থ ও সম্পদ সরবাহ, গ্রামের মানুষের কাছে তথ্য প্রযুক্তি স্থানান্তর, ডিজিটাল ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া এবং গ্রামে শহরের সুবিধা তৈরি করার মতো কর্মসূচি সাধারণ ও প্রান্তিক মানুষকে লক্ষ্য করে। এসব কর্মসূচি ব্যক্তি শেখ হাসিনার উদ্যোগে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা দর্শন রেখে যাচ্ছেন। দলের অন্যদের বষয়টি বুঝতে হবে।

 
Electronic Paper