ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলীয় শৃঙ্খলা

হার্ডলাইনে আ.লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:২৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০১৯

উপজেলা নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিরোধিতা করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন এবং যেসব মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে অনেকটা হার্ডলাইনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত এপ্রিল মাসেই কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরোধিতাকারীদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। যেসব মন্ত্রী-এমপি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছেন তাদের তালিকাও তৈরি করা হয়।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে শেষ ধাপের উপজেলা নির্বাচন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিলেও চেয়ারম্যান পদে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগত মনোনয়ন দিয়েছিল। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এসব বিদ্রোহী প্রার্থী সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তিনি যতটা না বিদ্রোহীদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন তার চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছেন তাদের যেসব প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা বা মন্ত্রী-এমপি মদদ দিয়েছেন তাদের ওপর। এদের চিহ্নিত করে কারণ দর্শানোর সিদ্ধান্ত হলেও শেষ ধাপের উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল দল। নির্বাচন শেষ, এবার সাংগঠনিক অ্যাকশনের পালা।

দলের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নির্দেশ অমান্যকারী ও শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তার মধ্যে প্রথমটি হলো- যারা নৌকার বিরোধিতা করে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে কোন প্রেক্ষাপটে তারা দলের বিরুদ্ধে গেছেন তা জানতে চাওয়া হবে এবং প্রয়োজনে তাদের বহিষ্কার করা হবে। দ্বিতীয় নির্দেশ- কোনো উপজেলায় প্রার্থী মনোনয়নে ভুল ছিল কিনা তা তদন্ত করে বের করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃতীয় নির্দেশ-বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের যেসব মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতা মদদ দিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে তাদের নৌকা প্রতীক দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে অন্য সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

চতুর্থ নির্দেশনা হিসেবে তিনি বলেছেন, প্রশাসনের যেসব ব্যক্তি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করেছেন বা তাদের বিজয়ী করার জন্য নিয়মবহির্ভূত তৎপরতা চালিয়েছেন তাদেরও চিহ্নিত করে ব্যবস্থাগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। পঞ্চম ও শেষ নির্দেশনায় তিনি বলেছেন, যেসব জায়গায় নির্বাচন হয়ে গেছে সেখানে সব ধরনের বিরোধ মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সর্বত্র দল গোছানোর কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী দলের সর্বস্তরে ‘চেইন অব কমান্ড’ ঠিক রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড। সভাপতিম-লীর সদস্যদের নেতৃত্বে কয়েকটি টিমে ভাগ হয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা সফর শুরু করেছেন।

জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করে তৃণমূলকে শৃঙ্খলায় ফেরানোর ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন তারা। যদিও রেওয়াজ অনুযায়ী জাতীয় সম্মেলনের আগে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু এবার সেটা হচ্ছে না। বরং জাতীয় সম্মেলনের পরই তৃণমূলের সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করতে চায় বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। এছাড়া জাতীয় সম্মেলনকে দূরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে ধরে আগামী ২৩ জুন দলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরির উদ্যোগও নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

মূলত আগামী বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে ঐতিহ্য ও ঐক্যের শক্তিতে ঋদ্ধ একটি সুসংহত দল হিসেবে আওয়ামী লীগ মানুষের সর্বোচ্চ আস্থার জায়গাটি তৈরি করতে চায়। সেজন্য দলের মধ্যকার বিভাজন-বিভ্রান্তি, নেতাকর্মীদের মধ্যকার অনাস্থা-অসন্তোষের কোনো বীজ রাখতে চায় না। বিশেষ করে গত জাতীয় নির্বাচন এবং পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে ব্যাপক বিভক্তি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও অনেকে দলে তাদের অবস্থান বলবৎ রেখেছেন। তাদের সহযোগিতা করে নিন্দিত হয়েছেন অনেক মন্ত্রী-এমপি। অপরদিকে দলের অনুগত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা মূল্যায়িত হচ্ছেন না। এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ কাজ করছে। আওয়ামী লীগ দ্রুততম সময়ে এসব সংকট নিরসন করতে চায়। এজন্য প্রয়োজনে হার্ডলাইনেও যেতে চায় তারা।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য খোলা কাগজকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা হয়েছিলেন তাদের ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট। তাদের ‘পানিশমেন্ট’ পেতে হবে। তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, দলের শৃঙ্খলা বা নির্দেশ অমান্য যারা করেছে তাদের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে তাদের অবস্থানের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এর পর সাংগঠনিক ব্যবস্থা। তবে দল এ ব্যাপারে কোনো ‘হার্ডলাইন’ গ্রহণ করেনি বলেও জানান আবদুর রহমান।

 
Electronic Paper