ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিস্মৃতপ্রায় খালেদার মুক্তি আন্দোলন

কোন পথে বিএনপি (শেষ)

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪২ অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০১৯

সংসদের ভেতরে-বাইরে কাজ করার কৌশল নিয়ে সংসদে গেলেও নিজেদের দাবি-দাওয়ার পক্ষে কোনো আন্দোলনই সংঘটিত করতে পারেনি বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন রীতিমতো চাপা পড়ে গেছে। দুর্নীতি মামলায় কারান্তরীণ হওয়ার এক বছর চার মাস হতে চললেও তার মুক্তির দাবিতে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি কিংবা আইনগত পদক্ষেপ নেই দলটির। এমনকি বিএনপি নেতৃত্বাধীন নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতেও প্রাধান্য পায়নি খালেদার মুক্তির ইস্যু।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির শীর্ষনেতারা ‘ফাঁপা কথাবার্তায়’ যতটা ব্যস্ত ঠিক ততটা আন্দোলন সংঘটনের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। সরকারি দমনপীড়নের অজুহাতে মূলত বিএনপি নেতৃত্ব কৌশলী নীতি নিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতিতে অভিজ্ঞ হলেও আপসকামী মানসিকতার কারণে কঠোর কোনো কর্মসূচির কথা ভাবতে পারে না। ফলে আইনি লড়াই থেকে রাজনৈতিক লড়াই সর্বত্রই মার খেতে হচ্ছে দলটিকে।

কারও কারও মতো, বিএনপি এককভাবে তো পারছেই না, তার নেতৃত্বাধীন দুটি রাজনৈতিক জোটের মাধ্যমেও খালেদার মুক্তির আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। উপরন্তু গত নির্বাচনে গড়ে ওঠা জোট ঐক্যফ্রন্টের দ্বিধা-বিভক্তি কাটাতেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বিএনপিকে। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টকে প্রাধান্য দেওয়ায় পুরনো জোট ২০ দলের শরিকদের মধ্যে শুরু হয়েছে অসন্তোষ। এ জোট থেকে ইতোমধ্যে বের হয়ে হয়ে গেছে দুয়েকটি দল। এতে জোটের মধ্যকার ঐক্যও এখন নড়বড়ে। ফলে ওই জোট দিয়েও খালেদার মুক্তির আন্দোলন ত্বরান্বিত করা যাচ্ছে না।

অথচ বিএনপির অনেক নেতাকে গত রোজার মাসে বলতে শোনা গেছে ঈদের পরে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং পুনর্নির্বাচনের দাবিতে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। অবশ্য খালেদার মুক্তির দাবিকে বড় ধরনের রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি বা এ নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার সক্ষমতা বিএনপির এ মুহূর্তে আছে কি না- এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

বিএনপি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত পাঁচ বছর সংসদের বাইরে থাকা এবং আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে মামলা-হামলার শিকার হয়ে কোণঠাসা দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা কাজ করছে। দিনে দিনে তারা ‘আত্মবিশ্বাস’ হারিয়েছে। তার ওপর বিএনপির সভা-সমাবেশে থাকে প্রশাসনের নানা বিধিনিষেধ। ফলে মুক্ত পরিবেশে, অবাধে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছে না। এর মধ্যে দলটির নেতৃত্বাধীন দুটি জোটেও চলছে অস্থিরতা। এসব সামাল দিতেই বিএনপিকে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন সংঘটিত করার মতো বাস্তবতা নেই বিএনপির।

এ ছাড়া, সংসদে যাবে না বলে হঠাৎ করে বিএনপি সংসদে যাওয়ার ঘটনা দলটির নেতাকর্মীর মধ্যে চরম বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। দলের রাজনৈতিক কৌশল কী, চেয়াপারসনের মুক্তির ইস্যুতে কী ভাবছে দলের হাই কমান্ড তা নিয়ে এখনো স্পষ্ট নন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ফলে তৃণমূলে তীব্র আকাক্সক্ষা থাকলেও খালেদার মুক্তির আন্দোলন জমাতে পারছে না বিএনপি। যদিও ঈদের পর গত কয়েকদিনে রাজধানীতে ছোটখাটো কয়েকটি মানববন্ধন, সেমিনার ও আলোচনা সভায় বিএনপির কয়েকজন শীর্ষনেতাকে খালেদার মুক্তির আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে।

গত ১৬ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব। কিন্তু তার সত্যিকারের মুক্তি আসবে আন্দোলনের মাধ্যমে। রাজপথেই খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত হতে পারে। এজন্য আমাদের সংগঠিত হতে হবে এবং কর্মসূচি দিতে হবে। আমাদের এমন কর্মসূচি দিতে হবে, যাতে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।’

এর আগে কয়েকটি অনুষ্ঠানে নিজ দলের ব্যর্থতা স্বীকার করে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি সভা-সমাবেশ, গণঅনশন, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করেও সরকারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারেনি। বলেন, ‘কথায় কথায় সরকারের মামলা দেওয়ার কারণে আমাদের দলে ফাঁকিবাজ নেতা তৈরি হয়েছে।’ কখনো দলীয় নেত্রীর কারামুক্তি আন্দোলনের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ব্যর্থ নেতাদের পদত্যাগ করার কথাও বলেন তিনি।

আরেক শীর্ষনেতা নজরুল ইসলাম খানকে বলতে শোনা গেছে, ১৫ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পরও কয়েকদিনের মধ্যে জামিন পান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। আর পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে জামিনযোগ্য মামলায় জামিন পান না খালেদা জিয়া। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে গত ১ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গত বছরের অক্টোবরে তার পরামর্শেই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপি। আর ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমেই গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে খালেদা জিয়া ছাড়াই অংশগ্রহণ নেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুটি জোট।

 
Electronic Paper