ছাত্রলীগে ১৯ শূন্য পদ নিয়ে ‘লুকোচুরি’
২৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঢাবিতে
হাসান ওয়ালী
🕐 ১০:৩১ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০১৯
বিক্ষোভের মুখে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নাম উল্লেখ না করেই যে ১৯ পদ শূন্য ঘোষণা করেছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, বিতর্কিতদের বাঁচাতে শীর্ষ নেতৃত্ব ‘লুকোচুরি’র আশ্রয় নিয়েছে। তবে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিদেশ সফর থেকে ফিরলেই এ ব্যাপারে জানানো হবে। অন্যদিকে মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের। গতকাল বৃহস্পতিবার ২৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
পদবঞ্চিতদের আন্দোলনের মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৯ পদ শূন্যের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু বিপত্তি বাধে কোন কোন পদ শূন্য ঘোষণা করা হলো তা উল্লেখ না করায়। পদশূন্যের এ ঘোষণায় আলোচনা-সমালোচনায় মুখর নেতাকর্মীরা। বঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, অভিযুক্ত বিতর্কিতদের বাদ দিতেই নাম ঘোষণা করেনি শীর্ষ নেতারা। সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা অবধি অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা তাদের। এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের গত কমিটির প্রচার সম্পাদক এবং আন্দোলনকারীদের নেতা সাঈফ বাবু খোলা কাগজকে বলেন, ‘১৯ পদ শূন্য ঘোষণার মধ্যে লুকোচুরি করা হচ্ছে। বিতর্কিতদের বাঁচাতে তারা এ চালাকির আশ্রয় নিয়েছে। নামসহ স্পষ্ট বহিষ্কার করলে সমস্যা সমাধান হতে পারত। কিন্তু তারা সেদিকে না গিয়ে সময় ক্ষেপণ করছে।’
এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত কী হবে-জানতে চাইলে সাঈফ বলেন, ‘এ রোদের মধ্যে রাস্তায় থাকতে কার ভালো লাগে বলেন, আমরা আশা করছি ঈদের আগেই একটি সমাধান আসবে।’
তবে ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য খোলা কাগজকে বলেন, ‘মূল অপরাধীরা এই ১৯ জনের মধ্যেই আছেন। তবে কিছুদিন আগেই যেহেতু কমিটি ঘোষণা করা হলো, এখনই তাদের নাম প্রকাশ করলে সামাজিকভাবে তারা হেনস্তা হতে পারেন। যার কারণে এ মুহূর্তেই তাদের নাম ঘোষণা করা হয়নি।’
এ ১৯ জনের মধ্যে কি আন্দোলনকারীরা আছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যারা মধুর ক্যান্টিনে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল তারাও আছেন, একই সঙ্গে সংগঠনের শৃঙ্খলা যারা নষ্ট করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের বিবাদ প্রথম প্রকাশ্যে আসে ডাকসু নির্বাচনে প্যানেল দেওয়াকে কেন্দ্র করে। যার চূড়ান্ত রূপ নিল পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। সম্মেলনের এক বছর পর গত ১৩ মে সোমবার ৩০১ সদস্যের এ পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপরই বিক্ষোভে নামে পদবঞ্চিত এবং কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা। কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া এবং যোগ্যদের পদায়নের দাবি জানাতে গিয়ে দুদফা হামলার শিকার হন আন্দোলনকারীরা। হামলাকারীদের বিচার এবং বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের পদায়ন করার দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে বঞ্চিতরা। ৯৯ জনকে বিতর্কিত সাব্যস্ত করে তাদের নামও প্রকাশ করে তারা। বিপরীতে ১৭ জন বিতর্কিতের নাম প্রকাশ করে ছাত্রলীগ। তবে বহিষ্কার করতে গিয়ে নাম উল্লেখ করেনি সংগঠনটি। এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেছেন, প্রাথমিকভাবে আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯ জনকে শনাক্ত করেছি। আপা (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) দেশে ফিরলে আমরা তার কাছেই সব প্রমাণ ও তথ্য দেব।
রাব্বানীর এ বক্তব্যের সমালোচনা চলছে সংগঠনটির অভ্যন্তরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ডাকসুতে নির্বাচিত এক সদস্য বলেন, ‘সবকিছু করতেই যদি প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে হয় তাহলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাজ কী। আসলে এসব কথা বলে তারা নিজেদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন।’
২৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঢাবি ছাত্রলীগের
১ বছর মেয়াদি কমিটির সময়সীমা শেষ হওয়ার দুই মাস আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদসংখ্যা ১৫১টি হলেও কমিটি করা হয়েছে ২৫১ সদস্যের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বৃহস্পতিবার এই কমিটির অনুমোদন দেন।
২৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন ৫১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ১১, সাংগঠনিক সম্পাদক ১১, বিভিন্ন সম্পাদক ৩০, উপসম্পাদক ৯৬, সহ-সম্পাদক ৩৪ এবং সদস্য করা হয়েছে ১৬ জনকে।
কমিটিতে ১ নম্বর সহ-সভাপতি করা হয়েছে আকাশ সরকারকে, ১নং যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে হোসাইন আহমেদ সোহানকে, আর ১নং সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে এসএম মেহেদী হাসান শিমুলকে।
গত বছরের ৩১ জুলাই সঞ্জিত চন্দ্র দাসকে সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাবি ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।