ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগ
জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সাত প্রস্তাবনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ, মে ২৭, ২০১৯
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আইএস’ ও ‘আল-কায়েদা’ ইরাক ও সিরিয়ায় জিহাদ করতে গিয়ে পর্যুদস্ত হওয়ার পর ২০১৭ সালেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাদের পরবর্তী তৎপরতার কেন্দ্র হবে আরব মানচিত্রের হিন্দুস্তান? বর্তমানকালের পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। ২০১৬ সাল থেকে তারা হাদিসের কিছু বিচ্ছিন্ন উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে?কেয়ামতের আগে শেষ জিহাদ হবে হিন্দুস্তানের জমিনে, যেটি তাদের ভাষায় ‘গাজওয়ায়ে হিন্দ’, এবং এর প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে, প্রতিপক্ষকে কীভাবে ধ্বংস করতে হবে, তার উল্লেখ আইএস ও আল-কায়েদার প্রকাশনাগুলোতে এবং তাদের নেতারাসহ এ দেশীয় সহযোগীদের বিভিন্ন ওয়াজ ও জলসার বক্তৃতায় আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বাংলাদেশে আইএসের নতুন হুমকি ও কার্যক্রম : সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় জঙ্গিবাদ নির্মূলে সাত দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গি দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য প্রদর্শন করেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত কয়েক বছরে জঙ্গিদের বহু আস্তানা ধ্বংস করেছে। তাদের বহু হামলার চক্রান্ত ও উদ্যোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে। অনেক জঙ্গি ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে এবং অনেকে গ্রেফতার হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শাহরিয়ার কবির।
বর্তমান সরকারের সাফল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, জঙ্গি ও মৌলবাদী সন্ত্রাসের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’র ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়েছে। তবে এ কথা আমরা বারবার বলছি?জঙ্গি দমনই যথেষ্ট নয়, জঙ্গিদের আদর্শ ও রাজনীতি?যাকে আমরা ‘মওদুদীবাদ’ ও ‘ওয়াহাবিবাদ’ বলি, তাকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে নির্মূলের কোনো সমন্বিত কার্যক্রম কোথাও দেখছি না।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, দেশে যেহেতু শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল নেই, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ এবং সরকার ও গণপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন কার্যক্রমের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন উদ্যোগকে আরও সক্রিয়ভাবে পালন করতে হবে।
সরকার ও নাগরিক সমাজের জন্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাত দফা প্রস্তাবনার মধ্যে বলা হয়েছে- সংবিধানের ৩৮ ধারা অনুযায়ী ধর্মের নামে রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা, ওয়াজ ও খুতবার নামে যারা শান্তি ও সহমর্মিতার ধর্ম ইসলামকে অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা ও সন্ত্রাসের সমার্থক বানাবার অপচেষ্টায় লিপ্ত, সেসব ব্যক্তিকে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা, ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে অবিলম্বে সব ঘৃণা-বিদ্বেষ ও উন্মাদনা সৃষ্টিকারী প্রচারণা বন্ধ করা এবং প্রচারকদের শাস্তির আওতায় আনা, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন, গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের নেতাদের প্রতি আহ্বান-জঙ্গি, মৌলবাদী ও সন্ত্রাসীদের সব কার্যক্রমের ওপর নজরদারি রাখুন এবং মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন, মওদুদীবাদী মোল্লাদের আপত্তির কারণে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের সময়সূচি নিয়ন্ত্রণ, কিংবা চিরায়ত গ্রামীণ মেলার শান্তিপূর্ণ আয়োজনের ওপর বিধিনিষেধ জারি কোনোভাবে কাম্য নয়।
প্রশাসনের এ ধরনের কার্যক্রম সমাজে অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও উগ্রতা সৃষ্টির পক্ষে সহায়ক, যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষাকে মানবিক ও যুগোপযোগী করার পাশাপাশি সব শিক্ষা মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করাসহ মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত গাওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রতি জোর দেয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সহ-সভাপতি শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদ জায়া সালমা হক এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল প্রমুখ।