ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তৃণমূল চাইলে জাপার হাল ধরতে চান বিদিশা

মনোজ দে
🕐 ১১:০৫ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০১৯

ছয় মাস বয়সে পেয়েছিলেন মওলানা ভাসানীর স্নেহাশীষ। এ সূত্রেই যেন নিজেকে ভাবেন স্পেশাল বা ডিফারেন্ট ও জন্মগত জনপ্রিয় বলে। এরশাদের সঙ্গে পরিচয় ও প্রেম জীবনের এক মিরাকেল; পরবর্তী সময়ে ‘নোংরা রাজনীতির শিকার’ হয়ে ট্র্যাজিক বিচ্ছেদ। এরপরও ছেলে এরিককে ঘিরে বন্ধনের সূত্রটা অটুট। প্রতি ঈদেই এরশাদকে পাঞ্জাবি পাঠান বিদিশা। জীবনদর্শনে পজিটিভ তাই ভুলে যেতে চান অতীত। দলের নেতাকর্মী ও জনগণের মন জয় করে এগুতে চান সামনে। তৃণমূল চাইলে ধরতে চান জাতীয় পার্টির হাল। কিন্তু এবারে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেক বেশি ম্যাচিউরড। তাই আত্মবিশ্বাসী বিদিশা নির্দ্বিধায় বলতে পারেন, ‘এখন আমাকে নিয়ে খেলতে হলে বুঝেশুনে খেলতে হবে। পর্দার আড়ালে আমাকে নিয়ে খেলতে দেব না।’

জাতীয় পার্টিতে বিদিশার ফের সক্রিয় হওয়ার গুঞ্জন কিছুদিন ধরেই রাজনীতির ময়দানে চাউর। সর্বশেষ জি এম কাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার নেপথ্যে বিদিশার বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করেন অনেকে। এসব গুঞ্জনের সূত্র ধরেই গত সপ্তাহে রাজধানীর গুলশানে বিদিশা ফাউন্ডেশনের অফিসে বিদিশার মুখোমুখি হন খোলা কাগজ সম্পাদক ড. কাজল রশীদ শাহীন। দীর্ঘ আলাপচারিতায় বিদিশা অকপটে তার জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার নানা বিষয়-আশয় তুলে ধরেন।

ওই আলাপচারিতায় শুধু জাতীয় পার্টি বা বাংলাদেশের রাজনীতি নয়, দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের রাজনীতির নানা বিষয়ে কথা বলেন বিদিশা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত ধরেই তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এরশাদের সঙ্গে প্রেম ও পরিণয়ের সূত্র ধরেই রাজনীতির অনিশ্চয়তাভরাতুর পথে আসা সেটা তিনি স্বীকার করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক রোলমডেল। এ দেশের রাজনীতির জন্য শেখ হাসিনার আত্মত্যাগকেই এ ক্ষেত্রে তিনি এগিয়ে রাখেন। তবে ভারতের কংগ্রেস পার্টির সোনিয়া গান্ধীর স্টাইলকে তিনি অনুসরণ করতে চান।

বিদিশার সাম্প্রতিক দিন কাটে দারুণ ব্যস্ততার মাঝে। বিদিশা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নানা সামাজিক কাজে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজেও যায় তার বড় সময়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি বেশ সক্রিয়। নিজের ফেসবুক পেজে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক ইস্যুতে মতামত প্রকাশ করেন। রাজনীতির খবরাখবর ও হালচাল জানেন পত্রপত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে। নিয়তি বা ভাগ্যে তিনি বিশ্বাসী। অ্যাস্ট্রোলজি তার প্রিয় চর্চার বিষয়। ২০০৫ সালে এরশাদের সঙ্গে ট্র্যাজিক বিচ্ছেদের পর গত ১৪ বছর আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, দেশ-বিদেশের রাজনীতি নিয়েও পড়েছেন। বাংলাদেশের সংবিধান করেছেন মুখস্থ।

নিজের সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিদিশা বলেন, ‘এটা সত্যিই, আমি ভাগ্য নিয়ে এসেছি। আমি বাই বর্ন পপুলার। আমার নামের ভেতর নিশ্চয়ই কোনো ক্যারিশমা আছে, তা না হলে আমি নিজের নামই নিজে দেব কেন বা আমাকে আমার নামে সবাই চিনবে কেন? আমার মধ্যে সবসময় একটা পজিটিভ ভাইব্রেট আছে।’

এরশাদের সঙ্গে প্রেম ও বিয়ের প্রসঙ্গে তার মন্তব্য, ‘ওটা পিওর প্রেমই ছিল। সঙ্গে মিরাকল তো ছিলই। নাহয় বাবা সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে লন্ডনে পাঠাল আমাকে, আর আমি ওখান থেকে সবকিছু ছেড়ে-ছুড়ে চলে এলাম এরশাদের প্রেমে পাগল হয়ে।’

তার মতে, এরশাদের সঙ্গে প্রেমটা অনেক ‘স্ট্রং’ প্রেম। বিচ্ছেদ, হেনস্তা, জেলখাটা, নির্যাতন ভোগ করার পরও এ প্রেম কখনই দুর্বল হয়নি। তিনি মনে করেন, নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েই এরশাদ এ ধরনের কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বিদিশা বলেন, উনি নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন। উনাকে ব্যবহার করা হয়েছিল। ট্র্যাপ্টড হয়েছিলেন। ছেলে এরিককে ঘিরে এখনো এরশাদ ও বিদিশার মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে এরশাদের জন্য পাঞ্জাবি পাঠান বিদিশা। এরশাদ তার হাতের রান্না খেতে পছন্দও করেন।

একসময় জাতীয় পার্টিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টা দেখতেন। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ডাকলে আবারও তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আসতে চান। তিনি মনে করেন, জাতীয় পার্টি তার কাছে সন্তান এরিকের মতোই। তাই দলের একজন কর্মী আহত ছেলে তিনি বেদনা অনুভব করেন। তার দৃষ্টিতে আগামী দিনের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির অনেক কিছু দেওয়ার আছে। এ জন্য দলকে নিজেদের শক্তির ওপর দাঁড়াতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।

আগামী দিনে নিজের রাজনৈতিক প্রত্যাশা নিয়ে বিদিশা বলেন, এরশাদ সাহেবের হাত ধরে রাজনীতি শিখেছি। প্রোগ্রামগুলোতে আমাকে ইনট্রোডিউস করেছেন। সারা বাংলাদেশে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। দুঃখের স্মৃতিও আছে, ওরা আমাকে চোর উপাধি দিয়ে বের করে দিল। এটা কোনো দিনও ভুলব না। এ জন্য নিজের নির্বুদ্ধিতাকেও দোষ দিই, আমি তো খুব ক্লেভার পলিটিশিয়ান ছিলাম না। তবে এখন আমি অনেকখানি ম্যাচিউরড। এখন আমাকে নিয়ে খেলতে হলে বুঝেশুনে খেলতে হবে, পর্দার আড়ালে আমাকে নিয়ে খেলতে দেব না।’

 
Electronic Paper