ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ধান নিয়ে লঙ্কাকা-হেলদোল নেই কৃষক লীগের

হাসান ওয়ালী
🕐 ১০:৪০ অপরাহ্ণ, মে ২৪, ২০১৯

চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। ধানের দাম তলানিতে ঠেকায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষের। সেই সঙ্গে নতুন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে ধান কাটার পারিশ্রমিক। দুই মণ ধানের দামেও দিনমজুর মেলা দুরূহ হয়ে উঠেছে কোনো কোনো এলাকায়। ধান নিয়ে এ লঙ্কাকা-ের অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছে টাঙ্গাইলের এক কৃষক। নিজের ক্ষেতের পাকা ধানে আগুন দেয় ওই কৃষক। এরপরই নড়েচড়ে বসে সব মহল। কৃষকের ধান কাটতে সহযোগিতা করতে নেমেছে ছাত্রলীগও। কিন্তু হেলদোল নেই কৃষকের স্বার্থ নিয়ে দেখভালের জন্য আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের। সংগঠনটির এ নির্লিপ্ততা নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা।

এবারের বোরো মৌসুমে ধানের ফলন নিয়ে আশার সঞ্চার হয় কৃষকের মধ্যে। কিন্তু বিপত্তি বাধে ধান কাটতে গিয়ে। কারণ, প্রতি মণ ধানের দাম নেমে এসেছে ৫০০-৬০০ টাকায়। অথচ প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৭০০-৮০০ টাকা। ফলে গড়ে মণপ্রতি কৃষকের লোকসান ২০০-৩০০ টাকা। যদিও সরকার নির্ধারিত ধানের ক্রয়মূল্য ১০৪০ টাকা। কিন্তু সরকারের ধানের বদলে সিংহভাগ চাল ক্রয় নীতির সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগী, ফড়িয়া ও চালকল ব্যবসায়ীদের সংগঠন ধানের দাম বাড়াচ্ছে না। এ অবস্থায় ধানের দাম পড়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে কৃষকরা। এ পরিস্থিতিতে উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছাত্রলীগও সদলবলে নেমেছে ধান কাটতে। কিন্তু খোঁজ নেই খোদ কৃষক লীগের। সংগঠনটির এই নির্লিপ্ততায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারাও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে কৃষক লীগের ভূমিকা সবচেয়ে নিষ্ক্রিয়। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই গঠন করা হয় কৃষক লীগের কমিটি। মোতাহার হোসেন মোল্লাকে সভাপতি ও খন্দকার শামসুল হক রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটি গঠনের ৭ বছর পেরোতে চললেও কোনো নামগন্ধ নেই নতুন কমিটির। ১১১ সদস্যের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কার্যক্রম চালাচ্ছে দায়সারাভাবে। দিবসকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানেই থমকে আছে দেশের বৃহত্তর গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কৃষক লীগের। দেশের বেশির ভাগ ইউনিটেও নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সূত্র বলছে, সাংগঠনিক অক্ষমতায়ই কৃষক লীগের নির্লিপ্ততার মূল কারণ।

তবে, নির্লিপ্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শামসুল হক রেজা। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমরা কৃষকদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের বিভিন্ন ইউনিট কৃষকদের সরাসরি সহযোগিতা করছে। তবে, আমাদের নেতাকর্মীরা ফেসবুকে ওইভাবে না থাকায় এইগুলো প্রচারে আসছে না।’

ধানের দাম নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন মজুদদার ও মিল মালিকদের কারসাজিকে। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের প্রক্রিয়াগত ত্রুটিকেও চিহ্নিত করেছেন তারা। বিশেষ করে চাল সংগ্রহের নামে মিলার-ডিলারদের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের সুযোগ করে দেওয়ার পদ্ধতি বাদ দিয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল কেনার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ কৃষকদের এসব মূল সমস্যা নিয়ে কাজ করলে সরকারের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে কৃষক লীগের ইমেজও ফিরবে। তবে এসব নিয়েও গা নেই সংগঠনটির।

সূত্র বলছে, বেশির ভাগ কৃষক লীগের নেতাদের কৃষি কাজের সঙ্গে দূরতম সম্পর্কও নেই। এলাকাভিত্তিক রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতেই কেবল সংগঠনটির পদ-পদবির কদর থাকে। কৃষক লীগের পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করাই মুখ্য হয়ে ওঠে। এসব বিষয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, ‘কৃষক লীগে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আছে। কৃষকের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ আছেন। তারা কৃষকদের পক্ষে কাজ করতে কৃষক লীগ করেন।’

 
Electronic Paper