ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ছাত্রলীগের সংকটে নতুন মোড়

হাসান ওয়ালী
🕐 ১১:০৭ অপরাহ্ণ, মে ২১, ২০১৯

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংকট থামছে না ছাত্রলীগে। গত রোববার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে হওয়া বৈঠকে সমাধানের আশ্বাস মিললেও বহিষ্কারাদেশের পরই নতুন মোড় নিয়েছে সংকট। বহিষ্কৃত হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন পদবঞ্চিত আন্দোলনকারী জারিন দিয়া। আন্দোলনকারীদের দাবি ‘প্রহসনের তদন্তের মাধ্যমে’ আক্রমণকারীদের বাদ দিয়ে আহতদেরই বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব আশা করছে শিগগিরই মিলবে সমাধান।

বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব নেওয়ার পর ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিবাদ প্রথম প্রকাশ্যে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। আর অসন্তোষের চূড়ান্ত দেখা মিলল পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে। সম্মেলনের এক বছর পর গত ১৩ মে সোমবার ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসে। এরপরই বিক্ষোভে নামে পদবঞ্চিত ও কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা। কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া এবং যোগ্যদের পদায়নের দাবি জানাতে গিয়ে দুদফা হামলার শিকার হন আন্দোলনকারীরা। সবশেষ গত রোববার ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিবদমান দুই গ্রুপের নেতারা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান; সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক ও বাহাউদ্দিন নাছিমের উপস্থিতিতে বৈঠক শেষে চলমান আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে আন্দোলন স্থগিতের পরদিন সোমবার পাঁচ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বহিষ্কৃতদের মধ্যে জিয়া হল ছাত্রলীগ কর্মী সালমান সাদিককে স্থায়ীভাবে আর বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মুরসালিন অনু, জিয়া হল ছাত্রলীগের কর্মী সাজ্জাদুল কবির, কাজী সিয়াম ও সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য জারিন দিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এই বহিষ্কারাদেশ নতুন সংকট তৈরি করেছে। ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশকে বয়কট করেছে আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, প্রকৃত অপরাধীকে বাঁচাতে নিরপরাধ এবং আহতদের ওপর শাস্তি আরোপ করা হয়েছে।

অন্যদিকে বহিষ্কৃত হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন পদবঞ্চিত আন্দোলনকারী জারিন দিয়া। গত কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য দিয়া বহিষ্কৃত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সোমবার রাতে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে জারিন দিয়া লিখেন, ‘আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। জানি না কী করব। আমি যদি মারা যাই শোভন-রাব্বানী ভাইদের কাছ থেকে প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে আমাকে কলঙ্কমুক্ত করবেন পারলে।’ নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, এই বহিষ্কারাদেশের মাধ্যমে শান্ত পরিস্থিতি পুনরায় উত্তপ্ত হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় ছাত্রলীগের গত কমিটির প্রচার সম্পাদক এবং আন্দোলনকারীদের নেতা সাঈফ বাবুর সঙ্গে। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অফিসে আলোচনার সময় তারা আমাদের সব দাবি মেনে নেয়। যার কারণে আমরা আমাদের আন্দোলন স্থগিত করি। কিন্তু এর একদিন পরেই আমরা দেখলাম, প্রহসনের তদন্তের মাধ্যমে আহতদেরই বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের জারিন দিয়া মধুর ক্যান্টিনে আহত হলো, অথচ তাকেই বহিষ্কার করা হয়েছে। ’

এ মুহূর্তে আপনারা কোন পথে এগুবেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় নেতাদের ওপর আস্থা রাখছি। তারা আমাদের যে আশ্বাস দিয়েছেন, আশা করি তার বাস্তবায়ন হবে।’

সদ্য গঠিত ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পাওয়া নেতারাও আশা করছেন শিগগিরই মিলবে এ সমস্যার সমাধান। ডাকসুর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের খোলা কাগজকে বলেন, আপাত দৃষ্টিতে আমার কাছে মনে হয়েছে, শিগগিরই হয়তো এ সমস্যার শেষ হবে। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাদ বলেন, এখন তো পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হচ্ছে। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে লিখছে, এটি কারও জন্যই ভালো না। অভিযুক্তদের মধ্যে যারা আসলেই অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

 
Electronic Paper