ছাত্রলীগের কোন্দল সহসাই থামছে না
হাসান ওয়ালী
🕐 ১০:৪১ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০১৯
সহসাই থামছে না ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে শনিবার মধ্যরাতে। এ দিন শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ফের মারধরের শিকার হন পদবঞ্চিত নেতারা। খোদ সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনরত পদবঞ্চিতরা। তবে, মারধরের কথা অস্বীকার করেছেন রাব্বানী।
জানা যায়, বিতর্কিত যেসব নেতার নাম কমিটিতে এসেছে, তাদের বহিষ্কারের সময়সীমা ও মধুর ক্যান্টিনে হামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে টিএসসিতে বসেন তারা। কথা বলার একপর্যায়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ান সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী ও রোকেয়া হলের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার। সেখানেই হামলার মুখে পড়েন লিপিসহ বঞ্চিত নেতারা।
এ প্রসঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত গত কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী, লিপিকে মেরেছেন। এছাড়া রাব্বানীর অনুসারীরা আমাদের সবার ওপর হামলা করেন। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
তবে, মারধরের কথা অস্বীকার করেছেন গোলাম রাব্বানী। তিনি দাবি করেছেন, পদপ্রাপ্ত ও পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। আমরা ঠেকিয়ে দিয়েছি। তারা এটাকে ইস্যু তৈরি করছে।
এর আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্ষোভে নেমে মারধরের শিকার হন পদবঞ্চিতরা। সম্মেলনের ১ বছর পর গত সোমবার ঘোষণা করা হয় ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ওইদিন বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন পদবঞ্চিতরা। হামলার ঘটনায় ১০ থেকে ১২ জন আহত হন। এর পরই কমিটিতে থাকা বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামেন তারা। আন্দোলন স্তিমিত করতে বুধবার মধ্যরাতে নবগঠিত কমিটির ১৭ বিতর্কিত ও বিভিন্ন অপরাধ-অপকর্মে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করে ছাত্রলীগ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বহিষ্কার করে কমিটিতে বঞ্চিতদের স্থান করে দেওয়ার ঘোষণা দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। কিন্তু এখন অবধি এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি ছাত্রলীগকে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বিতর্কিত ৯৯ নেতার নাম প্রকাশ করেন আন্দোলনরত নেতারা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের কাছে বিতর্কিতদের তথ্য-উপাত্তসহ তালিকাও জমা দেন তারা। এ আন্দোলনের মধ্যেই ফের হামলার শিকার হলেন পদবঞ্চিতরা।
সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে ছাত্রলীগের এক পক্ষের দাবি, সদ্য গঠিত কমিটি নিয়ে গত কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বই এই পরিস্থিতির কারণ। কমিটি সোহাগ-জাকিরের মনঃপুত না হওয়ায় তাদের ইন্ধনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে পদবঞ্চিতরা। অন্যপক্ষ বলছে, শোভন-রাব্বানী ত্যাগীদের বঞ্চিত করে নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি করেছে। বিগত কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেককে এবার কমিটিতেই রাখা হয়নি। অন্যদিকে সভাপতি শোভনের ভাই এবং সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর জেলার নেতারা দখল করেছে গুরুত্বপূর্ণ পদ।
তবে পরিস্থিতির আশু সমাপ্তি হওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংগঠনটির নেতারা। এ প্রসঙ্গে সদ্য গঠিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য খোলা কাগজকে বলেন, আমি নিজে ডাকসু নির্বাচনে নির্বাচন করতে চেয়েও দলের মনোনয়ন পাইনি। তাই বলে তো আমি বিরোধিতা করিনি। ছাত্রলীগের প্যানেলকে বিজয়ী করতে আমি কাজ করেছি। ডাকসুতে মনোনয়ন না পেয়ে যারা ছাত্রলীগ প্যানেলের জন্য কোনো কাজ করেনি বরং অসহযোগিতা করেছেন, তারাও ত্যাগের গল্প সাজিয়ে মিডিয়ার সামনে কান্না করছেন। তবে যদি কেউ সত্যিকার অর্থে বঞ্চিত হয়, তাহলেও তো প্রতিবাদের জন্য দলীয় ফোরাম আছে। তাদের যে প্রতিবাদের ভাষা এবং কর্মপন্থা, এটা কোনো প্রতিবাদ নয় বরং বিরোধিতা। এ পরিস্থিতির শেষ হওয়া উচিত।