ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দ্বিধায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫৬ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০১৮

আগামী অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সমূহ সম্ভাবনার কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সে নির্বাচনকালীন সরকারে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিকে যে রাখা হবে না, তা অনেক আগেই বলেছিলেন তিনি।

২০১৪ সালের নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে ডাকার পরও না যাওয়া এবং নির্বাচন বর্জন করে সহিংসতার পথ বেছে নেওয়ার বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে রাজনৈতিক পর্যালোচনায়। কিন্তু বিএনপি পর্যালোচনাকে কতটা আমলে নিচ্ছে? আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিই বা কী তাদের- এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারান্তরীণের ঘটনা দলটিকে রীতিমতো বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে দলটির অসহায়ত্ব, সাংগঠনিক দুর্বলতা, আন্দোলনের কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধা প্রকাশ্য হয়ে পড়ছে। ২০১৫ সালে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘ঈদের পরে আন্দোলন’ কর্মসূচির  ঘোষণা রীতিমতো লজ্জাকর ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটা ঈদ চলে গেছে কিন্তু কোনোভাবেই আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। এবারও ঈদের পরে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে তারা। তবে এবারের আন্দোলন আর ব্যর্থ হবে না এবং আন্দোলন শান্তিপূর্ণ নাও হতে পারে বলে উল্লেখ করে বিএনপি নেতারা মূলত কঠোর আন্দোলনেরই ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিএনপি কি আদৌ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, খালেদার কারাবন্দিত্বের পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে। অথচ দলটি তার মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের কোনো আন্দোলনেই যেতে পারেনি। যদিও খালেদার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতেই গত পাঁচটি মাস কেটেছে বিএনপির। কিন্তু এ সম্পর্কিত কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ পায়নি দলটি। কারণ আন্দোলনের ইস্যু নিয়ে দলটি যে প্রবল ধোঁয়াশা ও দ্বিধার মধ্যে রয়েছে তা প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়েছে মানুষের কাছে। আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার পেছনে বিএনপির ওপর সরকারের অব্যাহত দমন-পীড়ন এবং বিপুলসংখ্যক কর্মীর কারান্তরীণ থাকার বিষয়টিকেই মুখ্য কারণ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। দমন-পীড়নসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েও বিএনপি আন্দোলনে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছে।
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার সুচিকিৎসার দাবিতে আজ সারা দেশে বিএনপির কর্মসূচি রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকাসহ দেশের জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। ঈদের পরে যে আন্দোলনের কথা বিএনপি বলেছে তাতে মূলত খালেদার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মতো দুটি দাবিই স্পষ্ট করতে চায় তারা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী গতকাল বুধবার খোলা কাগজকে বলেছেন, ‘ম্যাডামের মুক্তি ও সুচিকিৎসা দাবিতে আমাদের চলমান আন্দোলনের পাশাপাশি আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এই দুই মৌলিক দাবিতেই আমরা আন্দোলন সংঘটিত করছি। আজ সারা দেশে কর্মসূচি রয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনে যাওয়ার জন্য যে পরিবেশ দরকার সরকারকে সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তাই সে পরিবেশ তৈরি করবে।
পর্যবেক্ষরা বলছেন, বিএনপির দুটি ইস্যুর মধ্যে খালেদার মুক্তির ইস্যুটি আইনি গ্যাঁড়াকলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে এই ইস্যুতে তাদের আন্দোলন জমানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। যদিও দলটি বলছে খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। আদালত থেকে খালেদার মুক্তি না মিললে এ দাবিটি ক্লিশে হয়ে পড়বে। অপরদিকে তারা দাবি জানিয়েছে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের। সে সরকারে শেখ হাসিনা থাকলে তারা নির্বাচনে যাবে না বলেও সাফ জানিয়েছে। কিন্তু দলটি কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে না পারায় সরকারও তাদের এ দাবিকে আমলে নিচ্ছে না।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিএনপি খালেদার মুক্তি ইস্যুতে অটল থাকলে শেষতক আবার নির্বাচনী ট্রেন ফেল করতে পারে। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে চাপ তৈরি করে আলোচনার পথ সৃষ্টির দিকেই বিএনপিকে মনোযোগী হওয়া দরকার বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিএনপিকে দ্বিধা ঝেড়ে এক ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। হয় খালেদার মুক্তি নয় তো নির্বাচনকালীন সরকার। দুটো দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা বিএনপির জন্য এই মুহূর্তে দুঃসাধ্য বলেই মনে করছেন অনেকে।
অবার কেউ কেউ বলছেন, রাজনৈতিক বাস্তবতাই বিএনপিকে দ্বিধাগ্রস্ত করেছে। তবে বিএনপির যে জনভিত্তি তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দুটো ইস্যুতেই আন্দোলন জমাতে পারবে বিএনপি। মূলত অব্যাহত দমন-পীড়নের কারণেই দলটি কিছুটা বিচ্ছিন্ন ও দ্বিধান্বিত ইস্যু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে।

 
Electronic Paper