সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপির
প্রার্থী পদ এক সারি দীর্ঘ
তুষার রায়
🕐 ১০:৪২ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০১৯
সংসদে যোগ দেওয়ায় নিয়মানুযায়ী একজন নারী সংসদ সদস্য পাবে বিএনপি। এ আসনে প্রার্থী হতে প্রকাশ্যে কোনো তৎপরতা নেই। তবে পর্দার অন্তরালে চলছে নানামুখী দৌড়ঝাঁপ। অনেকেই গোপনে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লবিং-তদবির করছেন। অন্তত ডজনখানেক নারী নেত্রী সংসদে যেতে সক্রিয় রয়েছেন। দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতি করছেন তাদের মূল্যায়ন করা হোক।
এদিকে প্রার্থী বাছাইয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে গা-ছাড়া ভাব রয়েছে। বিএনপির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা সরাসরি বলছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ফলে তারেক রহমানের ‘গুডবুকে’ যার নাম রয়েছে তার কপালেই শিকে ছিঁড়বে বলে দলীয় সূত্রের খবর। এক্ষেত্রে রাজনীতির পরিবর্তিত বাস্তবতার কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে তারেককে। এজন্য তফসিল ঘোষণার সপ্তাহ পার হলেও এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি।
দলীয় টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা আলোচনায় রয়েছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান।
এছাড়া মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান ও সাবেক সংসদ সদস্য আশিফা আশরাফী পাপিয়ার নামও আলোচনায় রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে খালেদা জিয়া অসুস্থ ও কারাবন্দি, তারেক লন্ডনে। তারা সহসাই রাজনীতির মাঠে নামতে পারছেন না বলে মনে করা হচ্ছে। সে হিসেবে এখন প্রত্যক্ষভাবে বিএনপির নেতৃত্ব জিয়া পরিবারের হাতে নেই। এর সুযোগ নিতে পারে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এমন শঙ্কাও রয়েছে। ফলে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ চান শর্মিলা রহমান সিঁথি সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হোন। তবে এর বিরুদ্ধ মতও রয়েছে। তাদের মত শর্মিলা এই সংসদে অংশ নিলে বিএনপি আর কোনোভাবেই এই নির্বাচনকে অস্বীকার করতে পারবে না। সরকারও খালেদার পুত্রবধূকে সংসদে দেখিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের সাফাই গাইবে। তাছাড়া অনভিজ্ঞ শর্মিলাকে নানাভাবে রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতে পারে সরকার এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
এ রকম বাস্তবতায় বিএনপির ভেতর চলছে নানা সমীকরণ। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিঁথি শেষ পর্যন্ত বিএনপির টিকিটে সংসদে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কারণ বিএনপিকে পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় অনেক বিকল্প মাথায় রাখতে হচ্ছে। তবে আরেক সূত্রের খবর এই বিরূপ পরিস্থিতিতে শর্মিলাকে দেশে পাঠাতে রাজি নন খোদ তারেক রহমান। তবে জিয়া পরিবারের কেউ রজনীতিতে আসবে কিনা, তা নির্ভর করছে খালেদার সিদ্ধান্তের ওপর।
বিএনপির বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, এ পদ প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক হলেও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, আফরোজা আব্বাস, নিপুণ রায় চৌধুরী ও শামা ওবায়েদ।
আইনজ্ঞ হিসেবে স্মার্ট বক্তা রুমিন ফারহানা গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক পরিবার (অলি আহাদের মেয়ে) থেকে উঠে এসেছেন। দলের কূটনৈতিক উইংয়ে কাজ করছেন। টিভি টকশোসহ দলের বিভিন্ন সেলেও কাজ করে নিজের অবস্থানকে সংহত করেছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ধারণা রুমিন ফারহানা সংসদে সরকারকে নাজেহাল করতে পারবেন।
অন্যদিকে নিপুণ রায় চৌধুরীও এসেছেন রাজনৈতিক ঐতিহ্যসম্পন্ন পরিবার থেকে। তার বাবা দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ নিপুণ রায় রাজপথের আন্দোলনে দলের নজর কেড়েছেন। কয়েক দফা গ্রেফতার হয়েছেন নিপুণ। তাছাড়া গয়েশ্বর বিএনপির সংসদে যাওয়াসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এমনকি এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে তারেক রহমানের সমালোচনাও করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্পষ্টভাষী ও ক্লিন ইমেজধারী হিসেবে দলে গয়েশ্বরের একটা অবস্থান আছে। তার সমালোচনা অনেক সময় দলে অস্বস্তি তৈরি করে। গয়েশ্বরের মুখ বন্ধ রাখতে পুত্রবধূ নিপুণকে সংসদে পাঠাতে পারেন তারেক।
রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসও এ পদের বড় দাবিদার। দলের স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাছাড়া তিনি খালেদা জিয়ারও আস্থাভাজন।
এদিকে যোগ্যতার মাপকাঠিতে একচুলও পিছিয়ে নেই বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়েদের মেয়ে শামা ওয়ায়েদ। কূটনৈতিক উইংয়েও দারুণ ভূমিকা রাখছেন। তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। ফলে তার নামটি জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এদের মধ্যে লন্ডন দৌড়ে এগিয়ে আছেন শ্যামা ওবায়েদ ও রুমিন ফারহানা। এই দুইজন তারেক রহমানের ‘গুডবুকে’ রয়েছেন। এই দুজনের যে কোনো একজনকে সংসদে দেখা যেতে পারে বলে দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
একটি সূত্র জানায়, বুধবার সকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্যাংকক গেছেন। সেখান থেকে তিনি লন্ডন যাবেন। তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে সংরক্ষিত নারী আসন ও বগুড়া-৬ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন ফখরুল।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা গণমাধ্যমকে জানান, সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়ে দলের কোনো সিদ্ধান্ত জানা নেই তার। দল সিদ্ধান্ত নিলে তিনি সংসদে যেতে চান। শ্যামা ওবায়েদ বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। দল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
বিদেশ যাওয়ার আগে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সময়মতো সবই জানা যাবে।’
তফসিল অনুযায়ী, ২০ মের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। বাছাই হবে ২১ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৮ মে এবং ভোট ১৬ জুন।