এ কেমন উবাচ!
শফিক হাসান
🕐 ১০:২১ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০১৯
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবিত ও মৃত’ গল্পের বহুশ্রুত একটি পঙক্তি- ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই’। সেভাবে না হলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থেকেও বারবার ‘মৃত্যু’র মুখোমুখি হচ্ছেন। গত রোববার এক অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলটির নেতাকর্মীসহ সংবেদনশীল মানুষ। তারা বিস্মিত হয়েছেন শীর্ষ দুই নেতার বক্তব্যে! যদিও ৯০ বছর বয়সী এরশাদ নিজেও একাধিকবার বলেছেন তার সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই বলে দলের শীর্ষ নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কতটুকু শোভন তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন!
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদ নানাভাবেই আলোচিত-সমালোচিত। ছোট ভাই জিএম কাদেরকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ দিয়ে ‘ব্যর্থতা’র অভিযোগে প্রত্যাহার এবং পুনঃপদায়নের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে রসালো আলোচনার জন্ম দিয়েছেন সাবেক এ সেনাশাসক। এরপর নিজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ট্রাস্টে দান করে ফের আলোচনায় আসেন। তার এমন সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে জাপা নেতাকর্মীদের মধ্যে সমালোচনা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিশেষ করে জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, এরশাদের স্ত্রী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ, ছোট ভাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে ত্রিশঙ্কু অবস্থার। এর মধ্যেই শোনা যাচ্ছে সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিককে নিয়ে নানা গুঞ্জন। বিদিশার জাপায় ফেরার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। যদিও বিদিশা কোনো পক্ষে না গিয়ে আপাতত পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন।
গত রোববার জাপার ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতাদের নিয়ে এক বৈঠকে দলের শীর্ষনেতা জিএম কাদের ও মশিউর রহমান রাঙ্গার ‘মৃত্যুবিষয়ক’ বক্তব্য নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মহাসচিব বলেছেন, এরশাদের অবর্তমানেই তার প্রকৃত মূল্যায়ন হবে। জীবিত এরশাদের চেয়ে মৃত এরশাদ অনেক বেশি শক্তিশালী হবেন। অন্যদিকে একই অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, এরশাদের অবর্তমানে যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে, তা এককভাবে কারো পক্ষে পূরণ সম্ভব নয়।
গুরুত্বপূর্ণ এ দুই নেতা জীবিত এরশাদের মৃত্যু ভাবনায় যেভাবে মেতে উঠেছে তা রাজনীতির জন্য অস্বস্তিকর। খোদ এরশাদের জন্য তো আরো বেশি! যে কোনো মানুষের মৃত্যুই অবধারিত। কিন্তু মৃত্যু নিয়ে এমন জোরজবরদস্তি এবং ক্ষমতার ভাগাভাগির প্রশ্ন কতটা সমীচীন- ভেবে দেখার বিষয়। বস্তুত রাঙ্গা ও রওশন, জিএম কাদেরের দায়িত্বপ্রাপ্তিকে মানতে পারছেন না। যে কারণে ইতিপূর্বে ক্ষুব্ধ রাঙ্গা এরশাদের মৃত্যুর পর কীভাবে পদ-পদবি বণ্টন হবে সে বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত এরশাদের ছোট ভাইও ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকায় থাকতে পারলেন না। তাকেও যেতে হলো ‘জীবিত’ ও ‘মৃত’র দোলাচলে। গত রোববার এরশাদ বিষয়ে বক্তব্যে পরোক্ষভাবে তিনি ‘নিষ্ঠুর’ মৃত্যুর প্রসঙ্গই টেনেছেন।
৯০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গত ২০ মার্চ এরশাদ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, হয়তো এটাই আমার শেষ বক্তব্য। এরপরও এরশাদ একাধিকবার বক্তব্য দিয়েছেন, আরও দেবেন। জীবনসায়াহ্নে পৌঁছে তার অবর্তমানে কে ধরবে জাপার হাল তা নিয়েও চলছে বিস্তর ‘পরিকল্পনা’। ট্রাস্টে এরশাদ-বিদিশার পুত্র এরিক এরশাদের অন্তর্ভুক্তিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন বিদিশা সিদ্দিক। দলের কেউ কেউ দাবি করছেন বিদিশাকে ফেরানোর।