ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সরকার ও বিএনপি দুই মেরুতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪০ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০১৮

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাকে দ্রুত চিকিৎসা করানোর দরকার। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হলে খালেদা জিয়ার ব্রেন স্ট্রোক করতে পারে এবং পঙ্গু হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

গত ৯ জুন কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কারাগারের ভেতরে খালেদা জিয়ার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। উক্ত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতের জন্য এ ধরনের বিষয় বড় রকমের ঝুঁকির পূর্বাভাস বহন করছে। তাকে দেরি না করে ঢাকার বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদান করা জরুরি। এরপরই সরকার খালেদা জিয়াকে বাইরে উন্নত চিকিৎসা করানোর পরিকল্পনা নেয়। এর অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ১১ জুন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন প্রেস কনফারেন্স করে একথা জানান। তিনি বলেন, আমরা উনাকে (খালেদা জিয়া) বিএসএমএমইউতে নিয়ে যেতে চাই। বিএসএমএমইউ তৈরি রাখতে বলেছি। যদি উনি (খালেদা জিয়া) রাজি থাকেন। উনার রাজি হওয়ার একটা বিষয় আছে । কারা মহাপরিদর্শক বলেন, জেল কোড অনুযায়ী, সরকারি অর্থ খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ নেই। তবে সরকার চাইলে বেসরকারি হাসপাতালে কারও চিকিৎসায় অনুমোদন দিতে পারে বলে জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যয় কে বহন করবে, কীভাবে করবে, তার ফয়সালা করতে হবে বলে তিনি জানান। কারা মহাপরিদর্শক খরচের বিষয়টি বলার পরই বিএনপির পক্ষ থেকে প্রেস কনফারেন্স করে জানানো হয় যে, রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সকল ব্যয় তারা দল থেকে বহন করবেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন একথা বলেন।
মোশাররফ হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারি অনুমোদন ও অর্থ সংস্থানের বিষয়ে এতদিনেও সিদ্ধান্ত না হওয়া রহস্যজনক।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সমুদয় ব্যয় দল বহন করবে। কাজেই কালবিলম্ব না করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হোক।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিতে রাজি নন। তিনি চিকিৎসা করাতে চান বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে। কেননা সেখানে তিনি একাধিকবার চিকিৎসা করিয়েছেন এবং সেখানে তার আস্থা আছে।
গতকাল মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কানদার স্বাক্ষরিত চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার শামীম ইস্কানদারের পক্ষে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে এসে আবেদনটি জমা দেন। আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপির উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার।
আবেদনে শামীম ইস্কানদার উল্লেখ করেন, বর্তমানে আমার বড় বোন বেগম খালেদা জিয়াকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত। কারাগারের ভেতরে তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে দীর্ঘ কারাবাসে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে।
তাই তাকে দেরি না করে ঢাকার বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদান করা জরুরি।
এরপরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়ার প্রস্তাব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) যাবেন না বলে জানানোর পর খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য সিএমএইচএ চিকিৎসা নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে। সিএমএইচকে অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সবচেয়ে সমৃদ্ধ হাসপাতাল এটি।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। পুরাতন এই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে খালেদা জিয়াকে প্রথমে জেল সুপারের পরিত্যক্ত কক্ষে রাখা হয়েছিল। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মহিলা ওয়ার্ডে। বন্দিজীবনে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার দাবি করার পর গত এপ্রিলের শুরুতে তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে বিএসএমএমইউতে আনা হয়েছিল। তবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে ওইদিনই তাকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ফেরত নেওয়া হয়। এরপর এপ্রিল ও মে মাসে একাধিকবার বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কারাগারে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দলটি তাকে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে বা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানায়। এর মধ্যেই গত ৫ জুন খালেদা জিয়ার কারাগারে ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ করার খবর আসে।

 
Electronic Paper