ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সরকার সত্যকে গলা টিপে রাখতে চায়: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ২:১৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০১৯

বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের মেয়াদে সীমাহীন গুম-খুন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের কারনে বিদেশী গণমাধ্যম চ্যানেল আল-জাজিরার সম্প্রচার বাংলাদেশে থেকে ব্লক করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি্র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অভিযোগ এনে তিনি বলেন- আসলে সরকার সত্যকে গলা টিপে রাখতে চায়।

 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান সরকার গত এক দশকের বেশী সময় ধরে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংগঠন প্রকাশ্যে কিংবা তাদের গোপন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এই গুম-খুন করা হচ্ছে। এই গুম-খুনের সাথে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনও জড়িত বলে তথ্য-প্রমাণসহ বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। নিজেদের ব্যবসায়িক কারণেও গুম করা হচ্ছে মানুষকে। কোনো মানুষেরই জীবনের নিরাপত্তা নেই। ঘর থেকে বেরুলে তিনি আবার ঘরে ফিরতে পারবেন কি না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ সরকারের গোপন সংস্থার লোকজন ওৎ পেতে আছে।

বিএনপি্র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই গুম, খুন, ক্রসফায়ার, বেওয়ারিশ লাশের খবর। এসব খবরে সারাজাতি আতংকিত ও স্তম্ভিত। রোববার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টার বিরুদ্ধে তিনজনকে গুম করার অভিযোগ উঠেছে। প্রচ্ছায়া লিমিটেডের ৩ কর্মচারীকে আইনের অপব্যবহার করে তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে। সম্প্রতি এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশে আল জাজিরা ব্লক করে দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ থেকে এখন আর তাদের ওয়েব সাইটটিতে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। এর মাধ্যমে সরকার আবারো প্রমাণ করলো সত্যকে গলা টিপে রাখতে চায় তারা।

তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, বাকশাল পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গণমাধ্যমকে হত্যা করছে তারা। শুধু সত্য প্রকাশের কারণে চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি, পিস টিভি বন্ধ করে দিয়েছে। ‘আমার দেশ’সহ বহু প্রিন্ট মিডিয়া বন্ধ করা হয়েছে। স্বৈরাচার দীর্ঘায়িত হলে নাৎসীবাদের উত্তরণ ঘটে। এ সরকারও নাৎসীবাদের উপাসক।

ক্ষমতাসীনরাই যদি নিজেদের স্বার্থের কারণে মানুষকে অদৃশ্য করে তাহলে মনুষ্যত্বহীনতার এই ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে সাধারণ মানুষ কি বেঁচে থাকার কোনো রাস্তা খুঁজে পাবে? ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরাই যদি সহজাত বিচার-বুদ্ধি হারিয়ে গুম-খুনের সওদাগরীতে মেতে থাকে তাহলে মানবাধিকারের আর্তনাদ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাবে না-যা সভ্য সমাজে অনভিপ্রেত।

তিনি বলেন, বিএনপি ও সরকার বিরোধী অসংখ্য নেতা-কর্মীকে এখনো গুম করে রাখা হয়েছে। দেশটাকে এখন ‘গুমরাজ্য’ বানানো গয়েছে। ‘গুমঘর’ থেকে কেউ কেউ সৌভাগ্যক্রমে ফিরে আসলেও অনেকের স্ত্রী-সন্তান-মা-বাবা-স্বজনরা দিনরাত চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছেন হারিয়ে যাওয়া তাদের প্রিয়জনদের জন্য। তারা কার কাছে বিচার চাইবে? কার কাছে যাবে?

সরকারকে গুম-খুন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, গুম হওয়ার ১৫ মাস পর ফিরে এসেছেন সাবেক কূটনীতিক মারুফ জামান। কিন্তু বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ন কবীর পারভেজ, সাজেদুল ইসলাম, মাহবুব হাসান, মাজহারুল ইসলাম, আদনান চৌধুরী, পারভেজ হোসেনসহ প্রায় হাজার খানেক মানুষকে। এখনো নিরুদ্দেশ হয়ে আছেন বিগ্রেডিয়ার আবদুল্লাহিল আমান আজমী, ব্যারিস্টার আহমদ বিন কাশেম (আরমান)।

এ সমস্ত গুম হওয়া মানুষের জন্য তাদের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানরা কাঁদছেন। কিন্তু সরকার অনুভুতিশুণ্য, বোধহীন। সরকার নিজে গুম-খুনের নির্দেশ দিয়ে দানবরুপে জনগণের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে। দেশ বর্তমান ও অনাগত দিনের দু:শ্চিন্তা, অনিশ্চয়তা, হতাশায় ভরে গেছে। সরকার বেআইনী পথে হাঁটছে বলেই এই শ্বাসরোধী পরিবেশ। কারণ বিরোধী দল ও মতের প্রতি সরকার ও সরকারপ্রধান এর ক্ষোভ-ঘৃনা ও ধ্বংস করার মানসিকতার জন্যই এখন ভয়াবহ অরাজক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। অদৃশ্য করা, আটক করে কাস্টডিতে হাত-পায়ের নখ তুলে ফেলা, পায়ে-হাতে গুলি করে পঙ্গু করার যে সংস্কৃতি তৈরী হয়েছে তাতে মানুষ এখন প্রাণখুলে হাসতে বা কাঁদতেও ভুলে গেছে।

 
Electronic Paper