বয়কট শঙ্কায় স্বতন্ত্রে ঝুঁকছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী মার্চে। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও দলের অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলেন জানা গেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এ নিয়ে আওয়ামী শিবির তৎপর হয়ে উঠলেও, বিএনপিতে নিস্তব্ধ নীরবতা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিএনপির ভেতর এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার এক ধরনের কথা আছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও সংসদ নির্বাচনের পর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়। সে সময় ছয় ধাপে হয়েছিল এই নির্বাচন। নির্বাচনে অধিকাংশ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হলেও বিএনপির প্রার্থীরা ১০০ বেশি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন। জামায়াতেরও ৩৪ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ১০৫ জন। নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও দলীয়ভাবে প্রার্থী দেওয়া হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও পরে বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, কিন্তু এবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।
দলের নীতি-নির্ধারক মহল বলছে, মূল নির্বাচন নিয়ে এখনো বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় নতুন করে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ভাবনার অবকাশ নেই। সেই সঙ্গে এখনো সংসদে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি এসব বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো সিদ্ধান্তও আসেনি।
এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন মামলার জামিন নেওয়ার বিষয়ে মাঠকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপি প্রার্থীদের সহায়তা করতে বলা হয়েছে। আর যে এলাকায় বিএনপির প্রার্থী নেই, সেখানে দলের সিনিয়র নেতাদের মামলার বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। তবে দলের যখন এমন সিদ্ধান্ত তখন প্রথম দফায় ৮৬টির মধ্যে ২০টিরও বেশি উপজেলায় স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের দুই পদে নির্বাচনে লড়াইয়ে নামছেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বর্তমানে উপজেলার জনপ্রতিনিধিও। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করা যাবে কি না- এই প্রশ্ন যখন তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন বিএনপি নেতারা বলেছেন, দলে থেকে ভোট করা যাবে না।
গত রোববার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগামী উপজেলা নির্বাচনে দলের কোনো নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। যদি কেউ দলের এই সিদ্ধান্তের বরখেলাপ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে আগামী ১০ মার্চ ৮৬টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ২০টিরও বেশি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতারা। গত নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে বিজয়ী চেয়ারম্যান আছেন তিনজন। প্রায় অর্ধেক উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যানের দুটি পদে অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
সূত্রে আরও জানা গেছে, ৮৭টি উপজেলার (একটি স্থগিত) মধ্যে সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ৩২ জন।