ডাকসু নির্বাচন
ছাত্রলীগের প্যানেল দুই শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে
হাসান ওয়ালী
🕐 ১০:২৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জোরেশোরে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফা বসার পর গত সোমবার তফসিল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তফসিল ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছে ক্যাম্পাস একক আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে রাখা ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা টিএসসিকেন্দ্রিক সংগঠনগুলো নিয়ে সম্মিলিত শিক্ষার্থী প্যানেল ঘোষণা করবেন তারা। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শীর্ষ নেতার যে কোনো দুইজনের নেতৃত্ব থাকবে এ প্যানেলে।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তুলনামূলক শিক্ষার্থীবান্ধব নেতাদের সামনে রেখে গঠিত হবে ছাত্রলীগের প্যানেল। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বা সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ভিপি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস বা সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে জিএস পদে প্রার্থী করে আসতে পারে প্যানেল। প্যানেলে নেতাকর্মী ছাড়াও ছাত্রলীগমনা মেধাবী শিক্ষার্থী, বিতার্কিক, টিএসসিকেন্দ্রিক সামাজিক সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের দেখা মিলতে পারে।
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় রয়েছেন- ছাত্রলীগের বিগত কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি চৈতালী হালদার চৈতী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, গত কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক এবং টিএসসিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অমৃতসূর্য’র আহ্বায়ক রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শয়ন, সাবেক উপ-ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল হক সরকার, সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার হাবিব আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন বিন সাত্তার, সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক উপ-সম্পাদক তিলোত্তিমা শিকদার, শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের সভাপতি নিপু তন্বী, সাবেক কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিবিষয়ক উপ-সম্পাদক সাবরিনা ইতি। তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তেই জানা যাবে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমরা দলীয় (আওয়ামী লীগ) সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দল যাদের মনোনয়ন দেবে তারাই নির্বাচন করবেন। আমাদের মূল লক্ষ্য হবে ছাত্রলীগের প্যানেলকে বিজয়ী করা। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
কাদের নিয়ে প্যানেল গঠন প্রক্রিয়া এগুচ্ছে জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যদের নিয়েই প্যানেল গঠন করা হবে। সে ক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরেও মেধাবী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পর আগামী ১১ মার্চ হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় সংসদ খ্যাত ডাকসু কোনোভাবেই হাত ছাড়া করতে চায় না দলটি। ছাত্রদল বা অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে সুযোগ দিলেও তা যেন হিতে বিপরীত না হয় সে বিষয়েও নজর রাখছে দলটি। কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটিহীন ছাত্রলীগের প্যানেল নির্ধারণে সাবেক ছাত্র নেতাদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি করেছে আ.লীগ। ৪ সদস্যের সমন্বয় কমিটিতে দায়িত্ব পেয়েছেন- দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান। বর্তমান নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতাদের সামনে রেখে প্যানেল করছেন তারা।
অন্যদিকে তফসিলে ভোটকেন্দ্র হলের অভ্যন্তরে রাখা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হলেও বসে নেই ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। ভোটকেন্দ্র হলের অভ্যন্তরে রাখার বিরোধিতা করলেও প্যানেল গোছানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থীরাও শুরু করেছে প্রন্তুতি। দীর্ঘ ৯ বছর পর ক্যাম্পাসে শোডাউন এবং মধুর ক্যান্টিনে মহড়া দিয়েছে ‘ক্যাম্পাসছাড়া’ ছাত্রদল।
১৯৯০ সালের পর একাধিকবার ভোটের আশ্বাস এলেও ডাকসু নির্বাচন আর হয়নি। ডাকসু নির্বাচনের দাবি আদায়ে আদালতে পর্যন্ত যেতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। ২০১২ সালে এই রিট আবেদন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫ শিক্ষার্থী। রিটের সূত্র ধরে সর্বশেষ উচ্চ আদালত মার্চের মধ্যে নির্বাচন দিতে আদেশ দেন।