ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এমপি হতে চান ৬০০ নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯

আওয়ামী লীগের টিকিটে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে চায় ৬০০ নারী। গতকাল মঙ্গলবার মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিনেই ফরম সংগ্রহ করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকে। দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ফরম বিক্রির উদ্বোধন করেন।

টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনের নারী নেত্রীরাই মনোনয়ন প্রত্যাশার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তাদের পাশাপাশি অভিনয়, সংগীত জগতের তারকা ও সংস্কৃতিকর্মীরাও রয়েছেন নারী আসনের মনোনয়ন দৌড়ে। অগ্রাধিকার পাবেন ত্যাগী নেত্রী ও প্রয়াত নেতাদের স্ত্রীরা। গতকাল মনোনয়ন ফরম কিনেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কবি প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী অ্যাডভোকেট নীলুফার আনজুম পপি। ফরম কিনেছেন পূর্ণিমা রানী শীলও, যিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের জয়ের পর ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

নারী আসনে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় গণভবনসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বিভিন্ন নেতার কাছে সংরক্ষিত আসনের আগ্রহী প্রার্থীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের অন্তত ৬০০ প্রার্থী রয়েছেন সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের দৌড়ে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের প্রত্যেকেই নিজেদের সদস্যপদ টিকিয়ে রাখতে নানা পর্যায়ে তদবির চালাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ জানান, নির্বাচন কমিশন নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি চলবে। প্রতিটি ফরমের জন্য নেওয়া হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা করে। দেশের ৩৫০ আসনের সংসদে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। ৩০০ আসনে সরাসরি ভোট হলেও সংরক্ষিত আসন বণ্টন হয় ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, বিএনপি একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে একটি সংরক্ষিত আসন পেতে পারেন।

ধানমন্ডি কার্যালয়ের দুই ভবনে চারটি করে মোট আটটি বিভাগের ফরম বিক্রি হচ্ছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মনোনয়নপ্রত্যাশীরা লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম কিনেন। যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা আক্তার সকালেই ফরম কেনা শেষে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নারীরা সচেতন হচ্ছেন। তৃণমূলে নারীদের রাজনীতির বিভিন্ন কর্মকা-ে অংশগ্রহণ বাড়ছে। তাই প্রতিযোগিতা বেশি। এখান থেকেই নারী নেতৃত্ব তৈরি হবে।’

দশম সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের অনেক সদস্যই এবারের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেকেই ঝরে পড়েছেন। তারা এবার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শিরীন নাঈম পুনম, সহসভাপতি নাসিমা ফেরদৌসী, সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা, শ্যামপুর-কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন, সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিনা জাহান লিটা, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, মাহজাবিন খালেদ বেবী, ওয়াসিকা আয়েশা খান, অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, আখতার জাহান, নিলুফার জাফর উল্লাহ ও রোকসানা ইয়াসমিন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নারীনেত্রীদের মধ্যে সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে চাইছেন দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শামসুন নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য পারভীন জামান কল্পনা ও মারুফা আক্তার পপি।

সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদে থাকা নারী নেত্রীদের মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শাহিদা তারেখ দীপ্তি, সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সাবেরা বেগম, সাধারণ সম্পাদক নারগিস রহমান, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল, মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথী এবং তাঁতী লীগের কার্যকরী সভাপতি সাধনা দাশগুপ্তা সংরক্ষিত আসনের এমপি পদে মনোনয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

দলীয় সূত্র জানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার দলের কয়েকজন নেতা ও প্রয়াত নেতার স্ত্রীকে সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য বানাতে চান। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের স্ত্রী ও ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাকিয়া পারভীন খানম, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রয়াত এম এ আজিজের স্ত্রী রাবেয়া আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কবি প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী অ্যাডভোকেট নীলুফার আনজুম পপি, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের প্রয়াত সভাপতি বজলুর রহমানের স্ত্রী শিরিন আক্তার এবং বঙ্গবন্ধুর চাচাতো ভাই শেখ হাফিজুর রহমান টোকনের স্ত্রী শেখ অ্যানি রহমান। এ ছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরীকেও একাদশ সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য হিসেবে দেখা যেতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্র।

দলের নারীনেত্রীদের পাশাপাশি অভিনয়, সংগীত ও সংস্কৃতি জগতের তারকারাও রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নের আলোচনায়। এদের মধ্যে রয়েছেন নাট্যাভিনেত্রী খেলাঘরের সভাপতিম-লীর সদস্য শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, চলচ্চিত্রাভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ও জ্যোতিকা জ্যোতির মতো তারকা।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চাইবে, তারা একক, নাকি জোটগতভাবে নির্বাচন করবে। দলগুলোকে এ বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত ৩০ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। এরপর ইসি ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে। ১৭ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিলে মনোনয়নপত্র দাখিল, মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় জানানো হবে।

 
Electronic Paper