ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ইশতেহার পূরণে আ.লীগের রেকর্ড

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১১:০৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল সেখানে সরকারের আগের মেয়াদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গণতন্ত্র, সুশাসন থেকে শুরু করে আর্থসামাজিক উন্নয়নের নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সেই ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম ওই ইশতেহার বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সাফল্য আমি মনে করি, গণতন্ত্র, নির্বাচন এবং কার্যকর সংসদ, এ তিনটি আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল, এগুলো কিন্তু আমি বলব দারুণভাবে সফল হয়েছে। আবার অন্যদিকে আপনি যদি আর্থসামাজিক দিকটি দেখেন, তাহলে আমাদের যে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়, এত ব্যাপক সোশ্যাল সেপটি নেটতো তথাকথিত সোশ্যালিস্ট কান্ট্রিতেও এরকম নেই।’

তিনি বলেন, বৃদ্ধদের জন্য ভাতা, পঙ্গুদের জন্য ভাতা, কিংবা অটিস্টিক যারা তাদের জন্য ভাতা। এমনকি সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের জন্য ভাতা দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা, বিশেষ করে মেয়েরা যাতে স্কুলে থাকে, যাতে তাদের লেখাপড়া ধরে রাখা যায়, তাদের জন্য একেবারে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করে দেওয়া হয়েছে । এই যে কাজগুলো, যা আমাদের করার কথা ছিল, এর সবই আমরা অর্জন করেছি। শিক্ষার হার যদি ধরেন, তাহলে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি।’
গত ৫ বছরে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করা হয়েছে অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আসলে কোনো অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন, ‘ওই নির্বাচনী ইশতেহারে তারা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছিল সুশাসন, গণতন্ত্রায়ন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। এর অধীনে তারা নয়টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। একটি হচ্ছে শান্তি ও স্থিতিশীলতা, সংবিধান ও সংসদ, জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন ব্যবস্থা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ। দুর্ভাগ্যবশত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খুব একটা অগ্রগতি আমরা দেখিনি।’  তার মতে বাক স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার-সংকুচিত হয়েছে।
তবে এইচ টি ইমামের জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘অনেকে অনেক কথাই বলেন। যেমন আমি যদি গণতন্ত্রায়নের কথা বলি, এই বর্তমান পার্লামেন্টের কথাই ধরুন, যে যাই বলুন, এখানে যে জবাবদিহি, যে পরিমাণ আইন তারা গ্রহণ করেছেন, সেটা তো একটা বিরাট কাজ। যেমন মস্ত বড় একটা কাজ হয়েছে, ৭২-এর যে সংবিধান ফিরিয়ে আনা। সেই সংবিধানের মৌলিক অধিকারের যেসব বিষয় সেগুলো সব পুনঃস্থাপন করে, সংবিধানকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’
লেখক-গবেষক মহিউদ্দীন আহমেদ মনে করেন আওয়ামী লীগের গতবারের ইশতেহারের বড় একটি বরখেলাপ হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাস্তবায়ন না করা। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রশ্ন আছে। যেমন নিম্ন আদালতকে এখনো নির্বাহী বিভাগের অধীনেই কাজ করতে হয়, তাদের ইঙ্গিতে, ইশারায়। উচ্চ আদালতেও বিচারক নিয়োগের যে প্রক্রিয়াটি, সেটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। সুতরাং নানাভাবে নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে। এর ফলে বিচার বিভাগ ঠিক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। সাম্প্রতিককালে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে যে বিতর্কটি হয়েছিল, সিরিয়াস একটি অভিযোগ ছিল, যে বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।’
এর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা এবং মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও সরকার মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। কেবলমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেই সরকার তার অঙ্গীকার রক্ষা করেছে বলে মনে করেন মহিউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ তার অঙ্গীকার রেখেছে বলেই আমি মনে করি। এবং এই যুদ্ধাপরাধ আদালতটি চালু আছে। এখনো এটা কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি বলব যে মোটামুটি সরকারের ভূমিকা ইতিবাচক।’
আওয়ামী লীগের আগের ইশতেহারে দুর্নীতি দমনকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও গত ৫ বছরে দুর্নীতি কমেনি বলে মনে করছেন অনেকে। তবে অর্থনীতি, অবকাঠামো এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেসব অঙ্গীকার ছিল, সে ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বেশি সাফল্য এসেছে।
(সূত্র : বিবিসি বাংলা)

 
Electronic Paper