ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিএনপির ইশতেহারে ১৯ প্রতিশ্রুতি

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি পৃথক ইশতেহার ঘোষণা করেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গত সোমবার ইশতেহার ঘোষণার এক দিন পরে মঙ্গলবার বিএনপি আলাদা করে এ ইশতেহার ঘোষণা করে। ইশতেহারে ক্ষমতায় গেলে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিসংক্রান্ত অনুসন্ধান রিপোর্ট প্রকাশ, বড় বড় প্রকল্পের দুর্নীতির বিচার, গণতন্ত্রের অনুশীলন, রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা সুদৃঢ় করা ছাড়াও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে না থাকার বিধান, গণভোট পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন, সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ, ন্যায়পাল নিয়োগ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট বাতিল, বিশেষ ক্ষমতা আইন’ ৭৪ বাতিল, বেকার ভাতা প্রদানসহ ১৯ দফা প্রতিশ্রুতি এসেছে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে। কিন্তু ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচার’ বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

রাজধানীর লেকশোর হোটেলে খালেদা জিয়ার পক্ষে ইশতেহার ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ কেন নেই ইশতেহারে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, চলমান সবকিছুতে এ বিষয়ে বলা আছে।
মূল ইশতেহারে এ বিষয়ে উল্লেখ আছে দাবি করে অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, য্দ্ধুাপরাধীর বিচার অব্যাহত থাকবে। জাতি হিসেবে আমাদের মূল বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন। এ স্বাধীনতার যারা বিরোধিতা করেছে এবং অপরাধ করেছে, তাদের বিচার চলমান থাকবে। বিএনপির ইশতেহারে এ বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও বিএনপির সম্পৃক্ত ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান’ রাখার কথা স্পষ্টভাবে লেখা আছে।
ইশতেহারে বিএনপি উল্লেখ করেছে, সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। একাধারে পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধান করা হবে। বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ দেওয়া হবে। একদলীয় শাসনের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে তা নিশ্চিত করা হবে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি এবং উচ্চপদের সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রতিবছর প্রকাশ করা হবে। তরুণ দম্পতি ও উদ্যোক্তাদের সাবলম্বী হওয়ার জন্য ২০ বছর মেয়াদী ঋণ চালু করা হবে। শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। গরিব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত কৃষকের কৃষি ঋণের সুদ মওকুফ করা হবে।
গতকাল বিএনপি ঘোষিত ইশতেহারের সারক্ষেপে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে কিছু প্রতিশ্রুতি উল্লেখ রয়েছে। সেগুলো হলো মুক্তিযোদ্ধাকে ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক’ হিসেবে ঘোষণা করা এবং মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির নিরিখে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বৃদ্ধি, দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিত করে সেসব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা এবং তাদের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা।
বিচার বিভাগ বিষয়ে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করা হবে, মামলার জট দূর করার জন্য যোগ্য বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে এবং এর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, বর্তমান বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপির ইশতেহারের অনেক বিষয়ে সম্পর্ক বিদ্যমান। এর মধ্যে যেমন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য স্থাপন, একাধারে পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধান, মন্ত্রিসভাসহ প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে শর্তসাপেক্ষে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা, সংবিধানে ‘গণভোট’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন করা, দেশরক্ষা, পুলিশ ও আনসার ব্যতিত শর্তসাপেক্ষে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা থাকবে না ইত্যাদি।

 
Electronic Paper