ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এক প্রতীকে দুই ইশতেহার

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২৩ দলীয় জোট। দুই জোটেরই প্রধান ও বৃহৎ শক্তি বিএনপি। একই প্রতীকের নিচে থেকে এবারের নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি পৃথক ইশতেহার ঘোষণা করেছে। গত সোমবার ঐক্যফ্রন্ট এবং গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে কার্যত দুই ইশতেহারে মৌলিক কোনো তফাত দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

গত সোমবার রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণার সময় ফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। গতকাল লেক শোর হোটেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হয়ে বিএনপির ইশতেহার ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই।
বিএনপি সূত্র অবশ্য বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২৩ দলীয় জোটে মূলত বিএনপি শরিক হিসেবে রয়েছে। কিন্তু দেশে এবং রাজনীতিতে বিএনপি বৃহৎ ও প্রভাববিস্তারী দল। একাধিকবার দলটি রাষ্ট্রক্ষতায় ছিল। যে দুটি জোট রয়েছে তার প্রধান শক্তিই বিএনপি। ফলে নির্বাচনে তাদের নিজস্ব ও স্বতন্ত্র ইশতেহার এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা গতকাল প্রকাশ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঐক্যফ্রন্ট ৩৫ দফার ইশতেহারে যে কটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সে কটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে বিএনপির ১৯ দফার ইশতেহারেও। বিশেষ করে, ক্ষমতায় গেলে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত অনুসন্ধান রিপোর্ট প্রকাশ, বড় বড় প্রকল্পের দুর্নীতির বিচার, গণতন্ত্রের অনুশীলন, রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা সুদৃঢ় করা ছাড়াও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে না থাকার বিধান, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ, ন্যায়পাল নিয়োগ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বাতিল, বেকার ভাতা প্রদানের প্রতিশ্রুতিগুলো এক। এ ছাড়া গণমাধ্যমের ওপর কোনো রকম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সরকারি নিয়ন্ত্রণ না রাখা, সামাজিক গণমাধ্যমে মতো প্রকাশের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ তুলে দেওয়া, সংবিধানের ১১৫ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিম্ন আদালতকে পুরোপুরি সুপ্রিম কোর্টের অধীনে দেওয়া,  মন্ত্রিসভাসহ প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে শর্তসাপেক্ষে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা, সংবিধানে ‘গণভোট’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণেট গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন করা, দেশরক্ষা, পুলিশ ও আনসার ছাড়া শর্তসাপেক্ষে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা না রাখা এবং একদলীয় শাসনের সুযোগ রহিত করার প্রতিশ্রুতিগুলোও একই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি মূলত একই ইশতেহারই দিয়েছে। তবে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলমান রাখার অঙ্গীকার করা হলেও বিএনপির ইশতেহারে সে ব্যাপারে কোনো উল্লেখ নেই। এ ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমালোচনা এমন কি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের অধিকারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএনপির ইশতেহারে কৌশলে সে অধিকারের প্রশ্নটিকেও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বিএনপি কেবল বলেছে, রাজনৈতিক নেতাদের যুক্তিসঙ্গত সমালোচনার অধিকার থাকবে।

 
Electronic Paper