ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দুঃসময়ে জাপা

সাইদ রহমান
🕐 ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮

গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া কোনো স্বৈরাচারী শাসক পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমন বহাল তবিয়তে টিকে যাননি, যা বাংলাদেশে হয়েছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বেলায়। তিনি একা নন, বেশ ভালোভাবেই এখনো চলিষ্ণু তার হাতে তৈরি জাতীয় পার্টি। ভোটের সমীকরণে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ এ দলটি।
জন্মের পর থেকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একাধিকবার ভেঙেছে জাতীয় পার্টি, সেই সঙ্গে লেগে ছিল নানা সংকট। তবে এ দলকে নিয়ে আলোচনার কমতি ছিল না কখনই। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথমে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে না বললেও শেষ পর্যন্ত অংশ নেওয়ায় নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়েছে দলটির। পার্টির চেয়ারম্যানের বেফাঁস কথাবার্তায় দলের নেতাকর্মীরাও বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রায়শই। মাঝে এরশাদ ও দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের মধ্যে দ্ব›দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসায় অস্বস্তিতে পড়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।

ভোটের রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হওয়ার কারণে নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই নড়েচড়ে বসে জাতীয় পার্টি। একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রথমে ৩০০ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেও বিএনপিপ্রধান ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকেই রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা হতে শুরু করে দলটি। মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্ট-দুই নৌকাতে পা দিচ্ছেন এরশাদ-এ গুঞ্জন চাউর হয় সব জায়গায়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত দুই মাসে একের পর এক সংকটে দুঃসময় পার করছে জাতীয় পার্টি।
মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টি কত আসন পাবে-এটা নিয়ে শুরু থেকেই ছিল জল্পনা- কল্পনা। একশর কাছাকাছি আসন পাওয়ার কথা দলের পক্ষ থেকেও বারবার বলা হলেও নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে ৮০, ৬০, ৫০, ৪০ হয়ে সেটি এসে দাঁড়ায় মাত্র ২৯-এ! প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা ২৬, কারণ জাপার বরাদ্দকৃত আসনের ৩টিতে যৌথ প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা অনেকটা নির্বাচন হওয়ার আগেই পরাজয়ের মতো। চলতি সংসদে যে দলের এমপি ৩৪ জন সে দলের জন্য তার চেয়ে কম বরাদ্দ হওয়া মানে নিঃসন্দেহে তাদের গুরুত্ব কমে যাওয়ার প্রমাণ। ওদিকে মহাজোটের সঙ্গে দরকষাকষির আগেই কোটি কোটি টাকা মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে খোদ দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এমন অভিযোগ দলটির দুঃসময়কে আরও ঘনীভূত করে তোলে।
এমন অস্থিরতার মধ্যেই হঠাৎ করে ঘোষণা হলো, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে অব্যাহতি দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান। তার বদলে নতুন মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে। এ নিয়েও দলের অভ্যন্তরের কোন্দলের গন্ধ বাইরে বেরিয়ে আসে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মহাসচিব পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
এর মাঝে দলের চেয়ারম্যানের অসুস্থতা নিয়ে চলতে থাকে নাটক। সিএমএইচে আসা-যাওয়ার মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকে প্রকাশ্যে বলতে থাকেন, এরশাদ অসুস্থ নন, এটা তার রাজনীতি। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বলতে হয়েছে ‘রাজনৈতিকভাবে নয়, এরশাদ এবার সত্যিই অসুস্থ’। অনেকেই বলছেন, একথার পর এরশাদের অসুস্থতার পেছনে রাজনীতির বিষয়টি যেন আরও পাকাপোক্ত হলো! তবে শেষ পর্যন্ত এরশাদ গত ৭ ডিসেম্বরে চিকিৎসার কথা বলে সিঙ্গাপুরে গেলে অসুস্থতার বিষয়টি কিছুটা সত্য প্রমাণিত হলেও সংকট বেড়েছে জাতীয় পার্টিতে। অনেকেই মনে করছেন, মহাজোট এবং দলের অভ্যন্তরের চাপ সামলাতে না পেরে দেশত্যাগ করেছেন এরশাদ।
প্রশ্ন উঠেছে রওশন এরশাদের চুপ থাকা নিয়েও। দলের চেয়ারম্যানের অসুস্থতা কিংবা অবর্তমানে সক্রিয় থাকার কথা থাকলেও কয়েক সপ্তাহ ধরে নিশ্চুপ রওশন। স্বাভাবিকভাবেই দলের রওশনপন্থীরাও আরও বেশি চুপ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব কারণে লেজেগোবরে অবস্থা জাতীয় পার্টির।

 
Electronic Paper