আইনি মারপ্যাঁচে উদ্বিগ্ন বিএনপি
কী হবে খালেদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০১৮
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এখনো কারামুক্ত করতে না পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। যে মামলায় (জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা) দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে গেছেন সে মামলায় তিনি হাইকোর্টে জামিন পেলেও আইনি মারপ্যাঁচের কারণে কারাগার থেকে এখন পর্যন্ত তার মুক্তি মেলেনি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে না পারাটা তাদের জন্য ব্যর্থতা। আর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, শুধু আইনি লড়াইয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য রাজপথেও লড়াই করতে হবে।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে দণ্ডিত হওয়ার পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি সেখানে আছেন।
বিচারকি আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এর পর ১৩ মার্চ খালেদার জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ১৪ মার্চ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত করেন এবং আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ১৪ মার্চ দিন নির্ধারণ করেন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এরপর ১৪ মার্চ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ১৮ মার্চ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে আদেশ দেয়।
১৯ মার্চ এ মামলার শুনানি করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল গ্রহণ করে আপিল বিভাগ। পাশাপাশি ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেন আদালত। গত ৮ ও ৯ মে আপিল বিভাগে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন দুদক, রাষ্ট্রপক্ষ এবং খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা।
এরপর রায়ের জন্য ১৫ মে দিন ধার্য করেন আদালত। কিন্তু ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষ আরও অধিকতর শুনানি করেন। শুনানি শেষে দুপুর ১টায় খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে রায়ের জন্য ১৬ মে বুধবার দিন নির্ধারণ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
পরে ১৬ মে বুধবার দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। একই সঙ্গে ওই মামলা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। খালেদা জিয়া তার দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও মুক্তিতে বাধসাদে তার অন্য মামলাগুলো।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৩টি, ঢাকায় ২টি ও নড়াইলের ১টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। মুক্তি পেতে হলে তাকে এ মামলাগুলোয় তাকে জামিন নিতে হবে।
জানা গেছে, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে কুমিল্লায় দুইটি ও মানহানির অভিযোগে নড়াইলের একটি মামলাসহ মোট তিনটি মামলায় জামিন চেয়ে গতকাল হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
খালেদার আইনজীবীরা বলেন, কুমিল্লার দুই মামলায় আগামী ৭ জুন জামিন আবেদনে শুনানির দিন। এ মামলায় শুনানির দিন এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করা হলে তা খারিজ হয়। আর মানহানির অভিযোগে নড়াইলের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় জামিন আবেদন করা হয়েছে। আজ মামলা তিনটি হাইকোর্টের বেঞ্চে কার্যতালিকায় থাকার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গত শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ভাসানী ভবনে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করতে না পারা আমাদের নিজেদের ব্যর্থতা। তিনি বলেন, আমরা বারবার চেষ্টা করেছি, কথা বলেছি, আন্দোলন করছি। আমাদের হাজারো নেতাকর্মী জেলে গেছে। তারপরও আমরা দেশনেত্রীকে বাইরে নিয়ে আসতে পারিনি। এটা একদিকে যেমন আমাদের ব্যর্থতা, অন্যদিকে এর মাধ্যমে সরকারের ভয়ঙ্কর চেহারাও প্রকাশিত হয়েছে। তবে তিনি আশা করেন ঈদের আগে অবশ্যই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন।
একই দিন শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, আইনি লড়াইয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলন করতে হবে। ঈদের পরে ব্যাপক কর্মসূচি দিতে হবে।