সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপিতে বিদ্রোহ, মানছে না দলীয় নির্দেশনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৬:৪৮ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০২৩

সরকার বিরোধী আন্দোলনে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে কাজ করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। রাজপথে পরীক্ষিত কর্মীদের দিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে জেলা-উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিজে মাঠে থেকে কর্মসূচি সফল করার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে তার।
কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে দক্ষ ও ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে নিজ প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মচারী দিয়ে উপজেলা বিএনপিকে পরিচালনা করছেন সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ মো: আব্দুল্লাহ। উপজেলা আহবায়ক কমিটির সদস্যদের পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পছন্দের লোক দ্বারা কমিটি গঠনেরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করে এখন পর্যন্ত উপজেলার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোনো সভায় উপস্থিত হননি। এমনকি কোনো মিছিল-মিটিংয়েও নেতৃত্ব দিয়ে সফল করেননি। তার দল বিরোধী নানামুখী কর্মকান্ডের কারণে উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির ২৯ জন সদস্য পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন।
আজ সোমবার সকালে সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই হুমকি দিয়ে অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে শেখ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। এই সরকারের সঙ্গে শেখ আব্দুল্লাহর আতাঁত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন নেতারা। এই সরকারের সময় যখন উপজেলার নেতারা মামলা হামলায় জর্জরিত, সেখানে আব্দুল্লাহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিআইপি পদক নেন বলেও অভিযোগ তাদের।
এসব নানান অভিযোগ, স্থির চিত্রসহ বিভিন্ন তথ্যাদি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বরাবর পাঠানো হয়েছে। পদত্যাগে হুমকি দেওয়া নেতাদের দাবি, কেন্দ্রের সিনিয়র কোনো নেতার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সদস্য ও সাবেক উপজেলা সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ধীরন এসব নেতাদের পক্ষে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। তাদের অভিযোগ, সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ'র অরাজনৈতিক সুলভ আচরণ, স্বেচ্ছাচারী মনোভাব, উপজেলা আহবায়ক কমিটির সদস্যদের পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পছন্দের লোক দ্বারা ইউনিয়ন কমিটি গঠন করছেন। তিনিই কেন্দ্র ঘোষিত ঘোষিত কার্যক্রমে অংশ না নেন। এমনকি আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১ বছরে এখনো উপজেলা বিএনপির কার্যালয় এসে কোনো সভা করেননি। .
এসব নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আহ্বায়ক কমিটি করে দিয়েছেন। কিন্তু আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে নিজ বাড়িতে বসে একক সিদ্ধান্তে পছন্দের ব্যক্তিকে কমিটি করে তিনি। সদস্য সচিব হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছেন পছন্দের ব্যক্তিকে। যিনি এর আগে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। চলমান ইউনিয়ন কমিটির দায়িত্ব কাউকে না দিয়ে, কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে শুধুমাত্র ফেসবুকের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে ১৪টি ইউনিয়নের কমিটির বিলুপ্ত করেন। আবার পরবর্তীতে সাত মাস পর পছন্দের লোক দিয়ে পুর্ণরায় ফেসবুকের মাধ্যমে ১৪ ইউনিয়নের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
উপজেলার আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি এসব ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা। অথচ গত ১৫ বছর ধরে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে, মামলা হামলার স্বীকার নেতাকর্মীদের বাদি দিয়েই পছন্দ লোকদের বসিয়েছেন পদে। ফলে ত্যাগী নেতারা কর্মসূচিতে না থাকায় উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। উপজেলার সকল নেতাকর্মীদের মধ্যেও চরম হতাশা বিরাজ করছেন।
আব্দুল কুদ্দুস ধীরন ছাড়াও এসময় অন্যদের মধ্যে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন- আহবায়ক কমিটির সদস্য আওলাদ হোসেন মোল্লা, মহিউদ্দিন আহমেদ, জসিম উদ্দিন খোকন, দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া, আব্দুল খালেক শিকদার, জায়েদুল ইসলাম, আজিজুল হক খান, মুজিবুর রহমান খান, আলী আনসার মোল্লা, শাহ আলম, মিসেস শিলা কামাল, সাবেক সদস্য কাজী কামরুজ্জামান লিপু, ওমর ফারুখ রিগ্যানসহ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় শতাধিক নেতা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, অনেক ইউনিয়নের সম্মেলন হয়েছে কিছু ইউনিয়নে করা যায়নি। পুলিশে ঝামেলা করেছে। চেষ্টা করি সম্মেলন করে কমিটি দেওয়ার। যারা আজ সম্মেলন করল তারা গোপন আঁতাত করেই রাজনীতি করে। কেউ মামলা খায় নাই। আমরা দেশে থাকলে মামলা খাই।
এ বিষয়ে ধীরেন কুদ্দুস জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেও বনানী থেকে ৫৪ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। অনেকে এখনো মুক্তি পায়নি। এই সরকারের আমলে মামলা হামলা তার চেয়েছে (শেখ আব্দুল্লাহ) আমরা বেশি খেয়েছি।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
