ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিএনপির দিন ফিরছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:২৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০১৮

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে-কেন্দ্র থেকে এমন ঘোষণার পর মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ উৎফুল্লভাব দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে যাওয়া ধর-পাকড় অনেকাংশে কমে গেছে। ফৌজদারি গুরুতর অপরাধ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। যদিও বিএনপি বারবার অভিযোগ করে আসছে তাদের নেতাকর্মীদের ধর-পাকড় অব্যাহত রয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য তারা নির্বাচন কমিশনের প্রতি বারবার দাবি জানিয়ে আসছেন।

গতকাল মঙ্গলবারও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের বদলিসহ কমিশনে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল সিইসি বরাবর নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে ইসি সচিবসহ ডিএমপি কমিশনারের বদলি দাবি করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির লক্ষ্যে দলটির পক্ষে এ ৯ দফা দাবি জানানো হলো।
জানা গেছে, বিএনপি একদিকে ইসিকে চাপে রাখছে অন্যদিকে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলার প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। গতকাল টানা তৃতীয় দিনের মতো মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রযুক্তির সাহায্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ওই মনোনয়ন বোর্ড যোগ দেন। আজ বিএনপি প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার শেষ হবে। এর পরে তারা চূড়ান্ত করবেন কোন আসনে কে ভালো প্রার্থী। কাকে মনোনয়ন দিলে দলের প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হবেন। একইসঙ্গে জাতীয় এক্যফ্রন্ট এবং ২৩ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির আসন ভাগাভাগির একটি বিষয় রয়েছে। সেখানে বিএনপিকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা বিএনপির দুটি জোটে ২৭টি দল রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল হচ্ছে বিএনপি। তারা বাকি দলগুলোর জন্য কতটি আসন ছেড়ে দেবে সেটি বিবেচনা করবেন।
গতকালও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারে যথারীতি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লন্ডন থেকে যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। তবে স্কাইপে নয়, অন্য কোনো মাধ্যমে তিনি ভিডিও কনফারেন্সে ছিলেন বলে জানিয়েছেন সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া কয়েক মনোনয়নপ্রত্যাশী।
গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাক্ষাৎকার দিতে আসা মনোনয়নপ্রত্যাশীরা একথা বলেন।
নোয়াখালী-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, মনোনয়ন বোর্ড আমাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যুক্ত হয়েছিলেন। স্কাইপে নয়, অন্য একটি উপায়ে তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে তারেক রহমানের এ সময়কার কথোপকথন নিরবচ্ছিন্ন ছিল না। সংযোগটি বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল।
তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কড়া নির্দেশ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। তার এই নির্দেশ আমি অনুসরণ করব। আমার আসনে অন্য যারা প্রার্থী হতে চান, আশা করি তারাও এটা ফলো করবেন।
ফেনী-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মিনার চৌধুরী বলেন, তারেক রহমান বড় স্ক্রিনে আমাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন। তারেক রহমানের কোন ধরনের নির্দেশনা ছিল জানতে চাইলে মিনার চৌধুরী বলেন, তার নির্দেশনা ছিল মনোনয়ন বোর্ডে যে সিদ্ধান্ত হবে তা যেন মেনে চলি এবং ধানের শীষকে বিজয়ী করতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করি।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দিয়ে সাক্ষাৎকার শুরু হয়। এই বিভাগের ৩৬টি আসন শেষ করে গতকাল বিকাল থেকে শুরু হয় কুমিল্লার ২১টি এবং সিলেটের ১৯টি আসনের জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ। আজ বুধবার ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ ফরিদপুরের মাধ্যমে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ পর্ব শেষ হবে।
সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা। গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বসে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর আগে আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেখেছি পুলিশকে ব্যবহার করে নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দাবি জানিয়েছিলাম বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি করতে হবে অথবা তাদের ক্লোজ করতে হবে। কিন্তু তা করেনি। এমনকি হেডকোয়ার্টার্সে বসে যারা নির্বাচনে কারসাজি করার পরিকল্পনা করছে, তাদেরও প্রত্যাহার করা হয়নি। তফসিল ঘোষণার পরও বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জামিন নিতে গেলে তাদের জামিনও দেওয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, বিএনপি গত ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎফুল্লের বিন্দু পরিমাণ ঘাটতি নেই। নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরদিন থেকে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে বিএনপিদলীয় প্রার্থীদের জন্য মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করলে নির্ধারিত ৫ দিনে ৪ হাজারের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম তোলেন। গত ৫ বছর বিএনপি রাজধানীতে তেমন কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারেনি বললেই চলে। দীর্ঘদিন পরে নির্বাচনী বছরে গত সেপ্টেম্বর বিএনপি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন রাজধানীতে শর্তসাপেক্ষে জনসভা করার অনুমতি পায়। তার পরে তারা পল্টনেও জনসভা করেছেন।
দীর্ঘদিন পরে তারা রাজধানীতে জনসভা করতে পারায় তাদের মধ্যে এক ধরনের উৎফুল্লভাব শুরু হয়। এরপর থেকেই ক্রমেই তাদের মধ্যে এক ধরনের চাঙ্গাভাব দেখা দেয়। যদিও তাদের ওপর দমনপীড়ন আগের মতোই অব্যাহত ছিল। বিএনপি নেতাকর্মীরা এসব দমনপীড়ন, খুন-গুম উপক্ষো করে তারা দলীয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। মাঝেমধ্যে থমকে গেলেও পুরোপুরি কখনো বন্ধ হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনকেই বিএনপি জোট একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। বিএনপি সবসময় জনগণের কথা বলে। জনগণের জন্যই রাজনীতি করে। আগামী নির্বাচনটা দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ দরকার।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ম্যাডাম নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার বার্তা দিয়েছেন। আমরা আগের দাবিতেই অটল আছি। তিনি নেতাকর্মীদের এ বার্তাও দিয়েছেন, নিজেদের মধ্যে সুসংগঠিতের ধারাটা যদি বজায় থাকে তাহলে সরকারের কোনো বাধা অত্যাচার-নির্যাতন বিএনপির জনস্রোত ঠেকাতে পারবে না।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ গতকাল খোলা কাগজকে বলেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে এটা আমি মনে করি। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোনো কারণ সুযোগ নেই। বিএনপি নির্বাচনটাকে আন্দোলনের অংশ হিসেবেই দেখছে। বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দলের নেতারা কিছুটা হলে উজ্জীবিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 
Electronic Paper