ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এক ট্র্যাকে দুই রাষ্ট্রপতি

সুলতান মাহমুদ
🕐 ১০:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল গত ৮ নভেম্বর ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। গতকাল সোমবার পুনঃঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৮ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। আর ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পরই সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে এলে জাতীয় নির্বাচন উৎসবমুখর হবে। আর একই দিন সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিকল্পধারা ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী) ভোটগ্রহণের তারিখ ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর করার দাবি জানিয়েছেন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ দাবি জানান। বি. চৌধুরীর এমন দাবির পর গতকাল সিইসি ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন। তফসিল ঘোষণার পর বিকল্পধারা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও গত ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে যুক্তফ্রন্ট নেতারা তার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে সাবেক দুই রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে দুটি দল বা জোট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দুই রাষ্ট্রপতি হলেন- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সংলাপও করেছেন।  
গত ৫ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সংলাপে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন। আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দেন। এদিন জাপার ৩৩ জন নেতা সংলাপে অংশ নেন।
সংলাপের শুরুতেই দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করার জন্য জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানও কোনো দাবি-দাওয়া না তুলে নির্বাচন প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের মনোভাব জেনে নিয়েছেন। গণভবনে যাওয়ার দুদিন আগেই এরশাদ বলেছিলেন, তিনি সংলাপ করতে নন, আসন্ন নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি বিষয়টি সুরাহা করতে যাবেন। সংলাপ শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেছেন, সৌহার্দপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে তারা আলোচনা করেছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কিংবা বিকল্পধারার মতো তাদের কোনো দাবি ছিল না।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের গণভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একমত হয়েছি যে বর্তমান সংবিধানের আলোকে যে ধরনের বিধান আছে, সেই অনুযায়ী সামনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
সব দল (বিএনপি জোটকে বুঝিয়েছেন) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আমরা মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচন করব, এটাই আমরা একমত হয়েছি। কোনো কারণে যদি সব দল নির্বাচনে না আসে, তাহলে আমরা হয়তো ৩০০ আসনে নির্বাচন করব।  
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান বলেছেন, যে অর্থে অন্য দুটি জোট আপনার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে সংলাপে বসেছেন, আমি সে অর্থে সংলাপ করতে আসিনি। আমরা এসেছি আপনার সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নিয়ে কিছু খোলামেলা আলোচনা করতে। কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে আসি নাই। নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন, তা জানতে এসেছি।
অন্যদিকে গত ২ নভেম্বর শুক্রবার বিকল্পধারাসহ যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের সংলাপ হয়। ১৪ দলীয় জোটের পক্ষে সংলাপে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আর যুক্তফ্রন্টের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও যুক্তফ্রন্টের র্শীষ নেতা অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সংলাপ শেষে বি. চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এর আগে গণভবনে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে যুক্তফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন জোট নেতাদের সংলাপ হয়।
সংলাপে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বলেন,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী এবং আগামী সংসদে ছেলে মাহী বি. চৌধুরীকে দেখতে চান।
সংলাপে বি. চৌধুরী আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের কাছে প্রথমে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমরা চাই, আপনারা আবার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করুন। আপনি আবার প্রধানমন্ত্রী হোন, আমরাও যেন সেই সংসদে থাকতে পারি। তখন প্রধানমন্ত্রী তার উদ্দেশে বলেন, আপনি নির্বাচন করুন, সংসদে আসুন, সে জন্য আমাদের কিছু করার থাকলে করব। এরপর বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বলেন, আমার বয়স হয়েছে। আমি আর নির্বাচন করতে চাই না। আমি বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করেছি, তিনি নির্বাচন করবেন। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা কাম্য। জবাবে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি কিছু বলেননি বলে সংলাপে উপস্থিত কয়েকজন নেতা জানান।
সংলাপে জাতীয় পার্টি এবং যুক্তফ্রন্ট নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে মনোভাব ব্যক্ত করেছেন তাতে তারা যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তা অনেকটাই পরিষ্কার। তবে তারা দুদলের র্শীষ পদে যারা আছেন তারা দুজনই সাবেক রাষ্ট্রপতি। এ ক্ষেত্রে তারা প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে গেলে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কতটুকু সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে পারবেন তার হিসাব মেলাতে ব্যস্ত।
বিএনপিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসন নিলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকারেও অংশ নেয়। এরশাদ নিজেও হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। এ ছাড়া তাদের দলের কয়েকজন নেতা-মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন গত ৫ বছর।

 
Electronic Paper