ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজশাহীতে সমাবেশে বক্তারা

দাবি মানলে নির্বাচনে যাবে ঐক্যফ্রন্ট

শ.ম সাজু, রাজশাহী
🕐 ১০:৩০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৯, ২০১৮

আন্দোলনের মাধ্যমেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি আদায় করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনের তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন সংকট আরও কঠিন, আরও ভয়াবহ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে গতকাল শুক্রবার রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন। পথে পথে বাধা অতিক্রম করে আপনারা গণতন্ত্রের জন্য এসেছেন। এখন সংকট আরও কঠিন, আরও ভয়াবহ। আজকে প্রশ্ন, গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না। আমাদের কথা বলার অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে কি না, তা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এই স্বৈরাচার সরকার আটকে রেখেছে। তিনি অসুস্থ, হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল, সেখান থেকে তাকে জেলখানায় নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। তারা পুলিশ দিয়ে, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে মানুষকে গণতন্ত্রের অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে বাংলাদেশের মুক্তি জন্য লড়াই করছি। সে জন্য আমরা সংলাপে বসেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু তারা তা করেনি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেনের। শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি সমাবেশে যোগ দিতে পারেননি। তবে মুঠোফোনে তিনি সমাবেশে যোগদানকারী নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

মির্জা ফখরুল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করে বলেন, তাহলেই আমরা নির্বাচনে যাব। নইলে নির্বাচনে যাব না। দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাকে নির্বাচনের মাঠে কাজ করতে দিতে হবে। অন্যথায় কোনো তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। রাজশাহী থেকে অনেকে রক্ত দিয়ে বিদায় নিয়েছে। তাদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাজশাহীর সমন্বয়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, উপদেষ্টা এসএম আকরাম, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, মো. শাহজাহান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার প্রমুখ।

সমাবেশ পরিচালনা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।

সমাবেশে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, আমাদের উসকানি দেবেন না। সাত দফা না মানলে দেশে নির্বাচন হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। চিকিৎসা ছাড়াই জোর করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার কি দোষ ছিল, তিনি দেশের জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছিলেন। সে জন্য এই সরকার তাকে কারাগারে রেখেছে। কারণ এই সরকার জনগণকে ভয় পায়। তারা ৫ জানুয়ারি প্রহসন করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছেন। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রশাসনকে বলতে চাই, আওয়ামী লীগের সময় শেষ। জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান। যদি না দাঁড়ান তাহলে জনগণ একদিন আপনাদের কাছে কৈফিয়ত দাবি করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না, তাই সংলাপ সফল হয়নি।

ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে অলি আহমদ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে সমাবেশে অলি আহমদ বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে রাজপথে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এর আগে সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জনসভা করে। এর কোনোটিতেই অলি আহমদ নিজে উপস্থিত ছিলেন না।
পুলিশের মাথা ঘুরিয়ে দেব : কাদের সিদ্দিকী

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, রাজশাহীর সমাবেশে আসতে যেসব পুলিশ আমার গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়েছে আমি ওদের মাথা ঘুরিয়ে দেব। তিনি বলেন, আল্লাহ যদি আমাকে দুটি বছর সময় দেন তাহলে আমি খুঁজে বের করব, যে বেটারা আমার গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়েছে আমি ওদের মাথা ঘুরিয়ে দেব।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের কথা দিয়েছিলেন, আর পুলিশ ধরবে না, সভা সমাবেশে বাধা দেবে না। আপনারা রাস্তায় মিটিং করবেন না, আপনারা মাঠে মিটিং করবেন। আপনারা রাজশাহীর নেতারা, আপনার রাজশাহীর পুলিশরা আমাদের রাস্তায় মিটিং করতে বলেছিলেন। আপনি (শেখ হাসিনা) বলেন, রাস্তায় মিটিং করবেন না আর আপনার পুলিশরা বলে রাস্তায় মিটিং করতে।

পালানোর পথ খুঁজছে সরকার : ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকার পালানোর পথ খুঁজছে পাবে না। সরকারের ভিত হলো পুলিশ, ঘুষ, অনাচার ও দুর্নীতি, গায়েবি মামলা আর গ্রেপ্তার। কিন্তু তাদের ভিত নড়ে গেছে। তারা এখন পালানোর পথ খুঁজছে।

সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজকে বাস বন্ধ, যোগাযোগ বন্ধ, তারপরও আপনারা হেঁটে এসেছেন। আমরা আছি, আপনারা মাঠে থাকেন। আপনাদের বিজয় সুনিশ্চিত।

সাত দফা মানা না পর্যন্ত নির্বাচন হবে না : মান্না
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে একতরফা নির্বাচনী বৈতরণী পার করা সম্ভব নয়। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বানচাল করতে চায় না। সাত দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তফসিল বদলান, আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি সে জন্য ফাঁদ পাতছেন। তা হতে দেওয়া হবে না।

এর আগে ২৪ অক্টোবর ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে সমাবেশ করা হয়। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. কামাল হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা চট্টগ্রাম ও ঢাকায় সমাবেশ করেন। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি থেকে এ ধরনের একটি ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বৈঠকের পর বৈঠক, নানা হিসাব-নিকাশের পর ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসা দলগুলো অভিন্ন দাবি ও লক্ষ্যে এক হয়।

এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে গত ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সংলাপে ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন।

 

 
Electronic Paper