ঐক্য গঠনে বিএনপির দৌড়ঝাঁপ, ‘পাত্তা’ দিচ্ছে না আ.লীগ
মাহমুদুল হাসান
🕐 ১:৩৫ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০২২
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা সমীকরণ তৈরি হয়েছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এজন্য ডান-বামসহ ছোট-বড় দলগুলোকে নিয়ে বড় ধরনের ঐক্য গড়ে তুলতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে দলটি।
আওয়ামী বিরোধী একটি বৃহৎ বলয় তৈরি করে বিএনপি তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে দীর্ঘদিন থেকেই। এবার ওই সমস্ত দলগুলোর সাথে ঐক্য গঠনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘বড় আন্দোলন’ গড়ে তুলে সরকারের পরিবর্তন ঘটাতে চায় তারা। যদিও বিএনপির বৃহৎ ঐক্য ও বড় আন্দোলনের হুমকি ‘পাত্তা’ দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। এই নিয়ে দলটি নতুন করে উদ্বিগ্নও নয়।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে বড় ধরনের আন্দোলন করেও সফল হয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যসহ ছোট ছোট বেশ কয়েকটি দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু তাতেও সফল হয়নি। নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছিল। আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। এবারও নির্বাচনের আগে সরকার পতনের জন্য বিএনপি বৃহৎ ঐক্যের ডাক দিয়েছে। সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছে।
গত ২৪ মে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি সংলাপ শুরু করে। প্রথম দফায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গনসংহতি আন্দোলন, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে সংলাপ করেন। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাপ-ভাসানী ও মুসলিম লীগের সাথেও সংলাপ শেষ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। গত ১৬ জুন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সাথে সংলাপ করে বিএনপি। এছাড়া গতকাল শনিবার জমিয়েত উলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের সংলাপ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলায় সময় আসেনি। আমরা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আরও যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের সাথে সংলাপ হবে তারপর আমরা এটা নিয়ে কথা বলবো।’
তিনি বলেন, আমাদের দাবি খুবই পরিষ্কার, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, গত একযুগের বেশি সময় ধরে বিএনপি ও তার জোট সঙ্গীরা বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও তার দল ছোট ছোট দুয়েকটি সভা-সমাবেশ করলেও দৃশ্যমান কোনো ধরনের বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়নি। তাছাড়া আন্দোলন করার মত শক্তি সামর্থ্য যেমন বিএনপির নেই তেমনি অন্যদিকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার মতো সেই পর্যায়ের নেতৃত্ব এখন নেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, নিজ দলের মধ্যেই যাদের ঐক্য নেই তারা আবার অন্যদের নিয়ে ঐক্য করবে কীভাবে?
বিএনপি ও তার সমমনাদের মধ্যে ঐক্যের চেয়ে বরং দূরত্বই বেশি দৃশ্যমান। গত নির্বাচনের আগেও বিএনপির ঐক্যের কিম্ভূতকিমাকার চেহারা দেশের মানুষ দেখেছে। ঐক্যের নামে বিএনপি ও তার শরিকদের মধ্যে লেজেগোবরে অবস্থা দেশের মানুষের স্মৃতি থেকে এখনো মুছে যাবার কথা নয়।
তিনি বলেন, বিএনপি এখন জনগণের কাছে যাওয়ার জন্য কোনো ইস্যু খুঁজে না পেয়ে তারা এখন সময় ক্ষেপণের জন্য নিজ বলয়ে সংলাপ করছে। বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টির নামে বৃহত্তম তামাশা সৃষ্টি করে বিএনপি নিজেদের ব্যর্থতা আড়ালের অপচেষ্টা করছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এককভাবে আন্দোলন করার সক্ষমতা হারিয়েছে বিএনপি। তাই এখন অন্যদের দলে টানার চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এদেশের কোনো প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপির এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিবে না।
আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের এ হুমকিতে নতুন করে উদ্বিগ্ন নয়। অতীতের মতো যদি আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে, জ্বালাও-পোড়াও করে, পেট্রোল বোমার রাজনীতি করে তাহলে তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের প্রতিহত করা হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা অতীতেও রাজপথে ছিলাম, এখনো আছি, অবিষ্যতেও থাকবো। আমরা রাজপথ ছাড়বো না।
তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন আসলে কবে হবে? ঈদ তো একটা চলে গেল, আরেকটা সামনে। কোন ঈদের পরে আন্দোলন হবে সেটা তারা নিজেরাও জানে না। তারা গত এক যুগ ধরে বলে আসছে ঈদের পর আন্দোলন এ ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে। কিন্তু সেই ঈদ আর আসেনি, আসবেও না।