ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

‘পদ্মাসেতু নির্মাণ, বিশ্বে মাইলফলক ঘটনা’: ড. সেলিম মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:২০ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২২

‘পদ্মাসেতু নির্মাণ, বিশ্বে মাইলফলক ঘটনা’: ড. সেলিম মাহমুদ

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের খবরদারি উপেক্ষা করে যেভাবে পদ্মা সেতুর মতো এত বড় একটি ভৌত কাঠামো নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করতে পারলেন, এটি শুধু দক্ষিণ এশিয়া কিংবা এশিয়া মহাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে একটি মাইলফলক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

শনিবার (১৮ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনার বিস্ময়কর সাফল্য নিয়ে এক জাতীয় সেমিনারের মূল প্রবন্ধে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থই রক্ষা করেনি, তার এই অসীম সাহসী সিদ্ধান্ত বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায়ও এক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির উদ্যোগে জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

সেলিম মাহমুদ বলেন, বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজের উদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের কী অর্জন হয়েছে আর এর বৈশ্বিক প্রভাব কী সে বিষয়ে অনেকেরই ধারণা নেই। আমাদের জাতীয় স্বার্থে এই প্রকল্প নিজেদের উদ্যোগে সফলভাবে সম্পন্ন করার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ন্যূনতম পঞ্চাশ বছর এগিয়ে গেলো।

তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের অযাচিত হুমকি ও প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এই ধরনের একটি বিশাল কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার কারণে বিশ্ব ব্যবস্থায়ও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।

‘এ ঘটনার ফলে বিশ্বব্যাংকসহ বহুপাক্ষিক ঋণ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে উন্নয়নশীল বিশ্বের দরকষাকষির ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে এই বিশ্বমোড়লদের নানামুখী শোষণ আর খবরদারির ওপর এক বড় ধরনের আঘাত। ফলে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে বহুপাক্ষিক ঋণ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর জাতীয় স্বার্থবিরোধী প্রভাব কমতে শুরু করবে।’

তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব উন্নয়নশীল দেশ, এমনকি উন্নত বিশ্বের কিছু দেশও বৃহৎ ভৌত কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক ঋণ দেওয়া প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার ওপর নির্ভরশীল ছিল।

এর আগে নির্মিত বাংলাদেশের সব বৃহৎ ভৌত কাঠামোই বিভিন্ন বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তায় ও কখনও কখনও তাদের অংশীদারত্বে সম্পন্ন হয়েছে। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এই প্রথম বাংলাদেশ কোনো উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তা ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে একটি বিশ্বমানের ভৌত কাঠামো নির্মাণ করলো।

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনার উদ্যোগে নির্মিত পদ্মা সেতুর ওপর কেবল বাংলাদেশেরই মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এই সেতুর ওপর কোনো বিদেশি কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ব থাকছে না। চীন শুধু ঠিকাদারি কাজ করেছে; দেশের দুই প্রান্তের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর ওপর কোনো বিদেশি কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।

‘বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা দিয়েছিলো। ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় তারা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলো, বাংলাদেশে দুই কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে ওই ভয়াবহ বন্যায় একটি মানুষও না খেয়ে মরেনি। ২০০৯-১০ সালে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যখন দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ও জোরালোভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিলেন, তখন বিশ্বব্যাংক বলেছিলো ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলো থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে গিয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ধসে পড়বে। তাদের সেই ভবিষ্যৎ বাণীকে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ভুল প্রমাণ করেছেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ সবখাতে শেখ হাসিনার সাহসী ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিস্ময়করভাবে উন্নতি লাভ করেছে।’

তিনি বলেন, বিদেশে নানা লবিস্ট ফার্মের মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে অশুভ গোষ্ঠী বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চেয়েছে। স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাস, মনোবল আর সুদক্ষ নেতৃত্বের কাছে এসব কিছুই টেকেনি।

‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আর প্রতিবন্ধকতা নস্যাৎ করে এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতো বিশ্ব মোড়লদের খবরদারিকে অগ্রাহ্য করে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার আকাশচুম্বী মনোবল, ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা, অসীম সাহস এবং অতুলনীয় মেধা ও দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ভৌতকাঠামো পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বাঙালির স্বপ্নজয় করেছেন। তার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ আরও বহু দূর এগিয়ে যাবে।

আলোচনা করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, পানি সম্পদ ও জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত। আলোচনা সঞ্চালনা করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শবনম আজিম।

 
Electronic Paper